২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানব পাচার আইনে সাতজনকে আসামি করে এ মামলা হয়।
Published : 12 Nov 2024, 07:06 PM
বরিশালে মানব পাচার আইনের দুইটি ধারায় স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনকে পৃথক কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার বরিশাল মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সোহেল আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত আলী খান ও এসএম সরোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
দণ্ডিতরা হলেন-বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন অর রশিদের ছেলে কাতার প্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যুথি এবং ছোট ভাই পলাশ হাওলাদার। পাশাপাশি তিনজনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় শুধু আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক বলে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা জানিয়েছেন।
মামলার বরাতে বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের সজল জমদ্দার ও মোফাজ্জেলের মধ্যে ব্যবসার সুবাদে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সজল মোফাজ্জেলকে জানায় যে, তার খালাতো ভাই পলাশ হাওলাদার কিউবা থাকেন। পরে তাকে কিউবা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। সে মোতাবেক পলাশের সঙ্গে কথা বলে মাসে ৮০ হাজার টাকা বেতনে মোফাজ্জেল কিউবা যেতে রাজি হন। শর্ত অনুযায়ী সজল ও মোফাজ্জেল পলাশের ভাই জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যুথিকে মোট ২১ লাখ টাকা দেয়।
ওই টাকা দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর কলকাতা, দিল্লি, সিঙ্গাপুর ও ফিজি হয়ে ভানুয়াতু পৌছে তারা। সেখানে সজল ও মোফাজ্জেলসহ মোট ১০ জনকে নিয়ে একটি নির্জন বাসায় আটকে রাখে পলাশ। পরে সেখান থেকে অষ্ট্রেলিয়া নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পলাশের ভাইসহ স্বজনদের আরও এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অষ্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়নি। ভানুয়াতুতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার পর কয়েকজন পুলিশের কাছে ধরা দেয়। পরে পুলিশ পলাশকে গ্রেপ্তার করে।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেওয়া ১০৩ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে তারা দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে আসামিরা তা দিতে অস্বীকার করে। পাশাপাশি খুন করার হুমকিও দেয়। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মানব পাচার আইনে বরিশাল মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন মোফাজ্জেল।
বেঞ্চ সহকারী বলেন, তাদের মধ্যে দুজনকে বাদ দিয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার কাজ শেষ হয়। বিচারক ১১ জনের স্বাক্ষ্য নিয়ে রায় দিয়েছেন। তাদের মধ্যে জসিমউদ্দীন ও পলাশকে দুই ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যুথীকে দুই ধারায় ১৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীদের দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। এ মামলার বাকি দুই আসামির বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে বলে জানান তিনি।