“শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
Published : 17 Sep 2024, 06:03 PM
বেতন-ভাতাসিহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। নগরীর টঙ্গী, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, চক্রবর্তী ও সদরের শিরিরচালা এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা দেড়টা পর্যন্ত ওই সড়কে যানজট দেখা গেছে।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে যানজট তৈরি হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের বেক্সিমকো থেকে জিরানি পর্যন্তও। সমস্যা সমাধানে দাবির বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় কাজ করছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে শিল্প পুলিশ জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও চক্রবর্তী এলাকায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। সকালে চন্দ্রার মাহমুদ জিন্স লিমিটেড ও নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং সারাবো এলাকার বেক্সিমকো টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভে নামে।
এছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার মেম্বারবাড়ী (শিরিরচালা) এলাকার এক্সিকিউটিভ হাই ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে।
এক্সিকিউটিভ হাই ফ্যাশন লিমিটেডের আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, তাদের কারখানায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করে। সোমবার কারখানা ছুটির পর রাত ১০টায় কারখানার আয়রনম্যান আরমানকে বাসায় ফেরার পথে মারধর করে তার মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগেই শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করে।
শ্রমিকরা বলছেন, তাদের সন্দেহ, দাবি উপস্থাপন করায় কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাদের লোকজন দিয়ে আরমানকে মারধর করেছে। মারধরের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছে।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে সিজন ড্রেস নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে গাজীপুরের টঙ্গীর খাঁ পাড়া এলাকায়। এ সময় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
শিল্প পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সিজন ড্রেস পোশাক কারখানার ৫ থেকে ৬’শ শ্রমিক কাজ করে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধসহ অন্যান্য দাবিতে কর্মবিরতি করে আন্দোলনে নামেন ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ওই দুই কারখানার শ্রমিকেরা কালিয়াকৈর-নবীনগর ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা ওই সড়ক দুটিতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তখন তীব্র গরমের মধ্যে ভোগান্তি পোহাতে হয় চালক ও যাত্রীদের।
সকাল থেকেই গত মাসের বকেয়া বেতনের দবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় এক পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে নায়াগ্রা টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের বেক্সিমকো জোনের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম মোর্শেদ বলেন, “শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শিল্প পুলিশ কাজ করছে।”
গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুরের তাসমিয়া হারবাল লিমিটেডের শ্রমিকরাও কর্মবিরতি পালন করছে বেতন বৃদ্ধিসহ আট দফা দাবিতে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা কারখানার ভেতরে হট্টগোল শুরু করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছে । এছাড়া ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা।
টঙ্গী পশ্চিম থানার পরিদশর্ক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, “কারখানার মালিকপক্ষ প্রয়ই বেতন নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে ঝামেলা করে। এর আগেও শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবির কথা জানায়। সমাধান না মেলায় কয়েকবার শ্রমিকেরা আন্দোলন করে তাদের দাবি পূরণ করেছে।
“এরই প্রেক্ষিতে সকাল থেকে দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়কে নামে। তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।”
এদিকে বৈষম্য বিরোধী শ্রমিক আন্দোলন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে নয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন ভেরিতাস ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, “টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে সিজন ড্রেস কারখানার শ্রমিকরা। দুপুর ১টার দিকে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।”