“বাস থেকে নামিয়ে বিএনপির প্রত্যেককে হকিস্টিক, রড দিয়ে পিটিয়েছে “

অদূরে পুলিশের গাড়ি থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি বলে আক্রান্ত এক স্থানীয় নেতার অভিযোগ।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 02:34 PM
Updated : 5 Feb 2023, 02:34 PM

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া এবং হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন। এমনকী আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েও বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানান তারা।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আটটি বাস ও ১০টি মাইক্রো বাসভর্তি নেতা-কর্মীর বহর বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে বাধার মুখে পড়ে।

এ সময় পথে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে কিছু যুবক কয়েকটি মোটরসাইকেল মাঝে রাস্তায় রেখে বাধার সৃষ্টি করে। নেতাদের বেধড়ক পিটিয়ে গাড়িবহরকে কুষ্টিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীদের। 

সেখানে বেধড়ক মারপিটে রক্তাক্ত জখমে গুরুতর আহত হলেও তাদের নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে দেয়নি হামলাকারীরা।

এমন অভিযোগ করেন দৌলতপুর উপজেলার ৭ নম্বর হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন (৫৫)।

তিনি বলেন, “এটা সরকারের দমন পীড়নের নগ্ন চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, ওরা নির্দয়ভাবে বেধড়ক মারধর করলো, আমাদের বয়ষ্ক নেতারা গুরুতর আহত হলেও নিকটস্থ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতেও দেওয়া হয়নি।

“প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হলেও বাধ্য হয়ে আমরা কুষ্টিয়াতে ফিরে এসে হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছি।”   

মারধরের শিকার উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম (৭০)।

তিনি বলেন, “আমরা দিনে গিয়ে সমাবেশ শেষে দিনেই ফিরে আসার জন্য শনিবার ভোরে গাড়িবহর নিয়ে খুলনা অভিমুখে যাত্রা করি। পথে বারোবাজার এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই দুইটা মোটরসাইকেল এসে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে।

“এরপর আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলে লোকজন আসে। একেবারে সামনে থাকা বাসটির যাত্রী হিসেবে যারা ছিল তারা সবাই বয়স্ক নেতা এবং সবাই নিজ এলাকায় জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি।”

তার ভাষ্য, “ওরা আমাদের বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেককে একজন একজন করে বের হতে বলে এবং বের হতেই হকিস্টিক, রড, বাটাম দিয়ে মারধর করতে থাকে।

এ সময় অন্য বাসগুলিতে ভাঙচুর শুরু করায় বেশকিছু গাড়ি পেছন দিক থেকে সটকে পড়ে। হামলাকারী সবাই উঠতি বয়সী ছেলে-পেলে। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না।”

দূরে পুলিশের গাড়ি থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ সিরাজুল ইসলামের।

অপরদিকে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় ভেড়ামারা রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ পরিচয়ধারীরা শতাধিক নেতা-কর্মীকে লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ করে বিএনপি। তাদের মারধর করে টিকেট ছিনিয়ে নিয়ে স্টেশন থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আক্রান্তদের।

যদিও অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছে ভেড়ামারা থানা পুলিশ।

ওই রাতে রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশের হামলার বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও আক্রান্ত যুবদল নেতা মন্টি সরকার।

তিনি বলেন, “ঘটনার সময় ভেড়ামারা থানার একজন এসআই এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমরা কোথায় যাবো? খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশে যাচ্ছি কথাটা বলার পর ওই পুলিশ আমাদের টিকিট দেখতে চায়। আমার কাছে থাকা ৪৩টি টিকিট ওই পুলিশ হাতে নিয়ে ওয়্যারলেসে থানা থেকে আরও পুলিশকে আসতে বলেন।”

“কিছুক্ষণের মধ্যে প্ল্যাটফর্মে ভেড়ামারা থানার ওসিসহ বেশ কিছু পুলিশ এসে হাজির হলো। ওসি সাহেব আমাদের বল্লেন, আপনারা কোথায় যাবেন বলেন? দৌলতপুরে ফিরলে এক ট্রিটমেন্ট আর খুলনায় যেতে চাইলে অন্য ট্রিটমেন্ট। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। তখন আমাদের সবাই যেদিকে পেরেছে, দৌড়ে পালিয়ে গেছে। এ সময় পুলিশের মধ্য থাকা কিছু যুবক কয়েকটি ককটেল ফোটাতে থাকে।”

“উপায়ান্তর না পেয়ে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি,” বলেন মন্টি সরকার।

ঘটনা বর্ণনার পুরোটার সচিত্র প্রমাণ স্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পাওয়া যাবে বলে এ যুবদল নেতার দাবি।

নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা স্মার্টফোন আগেই পুলিশ কব্জায় নেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ওসি (তদন্ত) আকিবুল ইসলাম জানান, রেল স্টেশনে পুলিশ পরিচয়ে মারধর করে টিকিট ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি। যে কারণে এ জাতীয় অভিযোগের কোনো ভিত্তি বা সত্যতা পুলিশের কাছে নেই।