কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অস্ত্রসহ ৩ ‘আরসা’ সদস্য গ্রেপ্তার

আরসার সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে খবরে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2024, 05:06 AM
Updated : 14 Feb 2024, 05:06 AM

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি-আরসার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে র‌্যাব।

বুধবার সকালে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগের রাতে উপজেলার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত অংশে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন-উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার (৩২) ও ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)।

র‌্যাব বলছে, হাসিম আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড, আলী জোহার আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার ও আলম আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী। তাদের সবার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় নতুন করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কর্নেল সাজ্জাদ বলেন, “উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সন্ত্রাসীরা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে গোপন খবরে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব।

“পরে ওই ক্যাম্পে তল্লাশি চালিয়ে আরসার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং দুটি বিদেশি অস্ত্র, একটি এলজি ও চারটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।”

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়; ২০১৮ সালে আরসায় যোগ দেয়। প্রথম দিকে সে নেট গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ করত। এরপর ২০২০ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত ব্লক জিম্মাদারের দায়িত্বে ছিল। তার নেতৃত্বে ৪ নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করে। পরে হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।

সে আরসার নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্যাম্পে সহিংসতা, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেট করা মাঝি, সাধারণ রোহিঙ্গা ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সে আত্মগোপনে চলে যেত।

হাসিমের বিরুদ্ধে ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম, ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস এবং ১৭ নম্বর ক্যাম্পে কাছিম হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে বলে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান।

আর হোসেন জোহার প্রকাশ প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, সে মিয়ানমারে থাকার সময় আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিল। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে আবার আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের প্রথম থেকে সে মৌলভী লাল মোহাম্মদ ও মুফতি আতিকের সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচারকাজ করত। কাচারীতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা ছিল তার।

Also Read: রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় থেকে বিপুল অস্ত্রসহ ৩ আরসা সদস্য গ্রেপ্তার

২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিায়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে সে আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে।

আর আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমারে থাকতেই আরসায় যোগদান করে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সে মিয়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করত এবং পরবর্তীতে আরসা নেতাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তার মোটরসাইকেলে করে পৌঁছে দিত। পরে আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষীর দায়িত্ব পায় সে। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, এক বছরে র‌্যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ৭টি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশীয় অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০ দশমিক ২১ কেজি বিস্ফোরক ও ২৮ টি ককটেল উদ্ধার করেছে।