“কুমিল্লা বিসিক এলাকাটি কিছুটা নিচু। যে কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি এখানে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।”
Published : 08 Jul 2024, 01:44 PM
হঠাৎ দেখে মনে হবে হয়তো কোনো পুকুরের অংশ। পানিতে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় সড়কটির কোনো অংশ দেখা যায় না। অবস্থা এতোটাই নাজুক যে, অনেক সময় গাড়ি ভাঙা সড়কে উল্টে যায়।
এ চিত্র কুমিল্লা বিসিক শিল্প নগরীর এলাকার। যেকোনো ঋতুতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়; অস্তিত্ব হারায় বিসিক এলাকার প্রবেশপথের মূল সড়কটি। আর বর্ষাকালে তো দুর্ভোগের সীমা নেই।
শিল্পের প্রসার ও বেকার সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালের শেষের দিকে কুমিল্লা নগরীর আশোকতলা এলাকায় ৫৪ দশমিক ৩৫ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্প নগরী।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যার ভেতর দিয়ে চলছে এই শিল্পনগরীর কার্যক্রম। ৬৪ বছরে এসেও যেন সমস্যার শেষ নেই।
বর্তমানে এই শিল্পনগরীটির বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ও পয়ঃনিষ্কাশনের নালা একেবারেই নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এখানকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঢুকে পড়ে পানি।
সবশেষ গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শিল্পনগরীর অধিকাংশ সড়কে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
শুধু বর্ষাকাল নয়, অন্য যেকোনো সময় সামান্য বৃষ্টি হলে বিসিকের সড়কগুলোতে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন পরিস্থিতির কারণে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এখানকার কারখানার মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা।
এদিকে বছরের পর বছর ধরে পুরো বিসিক শিল্পনগরী এলাকার বেশিরভাগ সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। খানাখন্দে ভরপুর সড়কগুলোর অবস্থা এমন যে, গাড়ি দূরের কথা; হেঁটে চলাচল করতেও বেশ কষ্ট হয় মানুষের।
দীর্ঘদিনেও এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এখানকার কারখানার মালিক ও শিল্প উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
অবকাঠামোর উন্নয়নসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা বদিউল আলম (সম্প্রসারণ কর্মকর্তা)।
তিনি বলছেন, “কুমিল্লা বিসিক এলাকাটি কিছুটা নিচু। যে কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি এখানে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অবকাঠামোর উন্নয়নসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“গত বছর প্রায় সাত কোটি টাকার কাজ হয়েছে। বাকি কাজগুলো শেষ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানে মোট ১৪৯টি প্লটের মধ্যে শিল্প কারখানা করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪২টি। বাকিগুলোতে অফিস, মসজিদ, ক্যান্টিনসহ প্রয়োজনী স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
ওই ১৪২টি শিল্প প্লটের মধ্যে আটা, অটোরাইস, মুড়ি, ময়দা, চানাচুর, সরিষা, ওষুধ, জাল, বিস্কুট, মিষ্টি, ক্যাবল, সুতা, অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল তৈরিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য ১৩১টি কারখানা চালু আছে।
এসব কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এখানে বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয় এবং সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
শিল্প-কারখানা রয়েছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা বিসিকের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কভার্ডভ্যানে করে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বর্তমানে এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সড়ক ও ড্রেনেজের। সামান্য বৃষ্টি হলেই বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। শিল্পকারখানার ভেতরেও পানি প্রবেশ করে।
এ ছাড়া অধিকাংশ পাকা সড়কের পিচের ঢালাই উঠে গেছে। সড়কে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ড্রেনের ময়লা সড়কে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া বেশিরভাগ ড্রেনেই ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। বছরের পর বছর ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখানে।
খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারক একটি কারখানার কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, “প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছরেও নানা সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী। এখানকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
“অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরপুর। বলতে গেলে নানা সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই শিল্পনগরীর কার্যক্রম। আমাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।”
আরেকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. আলী আকবর বলেন, “জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে এখানে। এ ছাড়া রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে বিসিকে শিল্প-কারখানা করতে উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান না হলে কুমিল্লা বিসিক আরও পিছিয়ে পড়বে।”
কুমিল্লা বিসিকের অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী বলে জানালেন আরেকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাসুদ আলমও।
তিনি বলেন, “কুমিল্লা বিসিকের অর্ধেকের বেশি সড়কের অবস্থা এতোটাই নাজুক যে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে মানুষের জন্য। এখানে উৎপাদিত মালপত্র নিতে আসা ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের চালকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক সড়ক লোড করা গাড়ি ভাঙা সড়কে উল্টে যায়।”
দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে কুমিল্লা বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা বদিউল আলম বলছিলেন, “কুমিল্লা বিসিকের সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধানসহ অবকাঠামো উন্নয়নে গত বছর একনেক থেকে প্রায় সাত কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখানে মোট ২১ হাজার ৫০০ ফুট ড্রেনের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ফুটের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এরই মধ্যে ড্রেনের কাজগুলো শেষ হয়েছে।”
এই শিল্প নগরীতে মোট ১০ হাজার ৭৫০ ফুট সড়ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্যে বেশি ভাঙাচোরা প্রায় পাঁচ হাজার ফুট সড়কের কাজ আমরা গত বছরে শেষ করেছি। তবে বাকি সড়কগুলোর অবস্থা বর্তমানে একেবারেই নাজুক। যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
“আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নতুন বরাদ্দ এলে বাকি সড়ক ও ড্রেনের কাজগুলো শেষ করা হবে।”
বদিউল বলেন, “আমাদের বিসিকের পশ্চিম পাশ দিয়ে যে পথে পানিগুলো নিষ্কাশন হওয়ার কথা সেই পথটি ক্লিয়ার না। এজন্য সামান্য বৃষ্টি হলেও সহজে পানি নামতে চায় না। যার কারণে গত বছর ড্রেনের কাজ শেষ হওয়ার পরও আমরা এর সুফল পাচ্ছি না। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি।
“তারা পশ্চিম পাশের পানি নিষ্কাশনের পথ সচল করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া আমরাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সমস্যার অবসান ঘটবে।”