২০ বছর ধরে সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি চালাচ্ছেন এই শিক্ষক।
Published : 09 Oct 2022, 06:08 PM
আড়াই দশক আগে নিজের প্রতিষ্ঠিত অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টির এমপিওভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় দেড়শ কিলোমিটার পদযাত্রা শুরু করেছে নেত্রকোণার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান।
নেত্রকোণার পারলার ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে রোববার দুপুরে সদর উপজেলার সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এই প্রতিষ্ঠাতার পদযাত্রা শুরুর সময় জেলার অন্যান্য প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকরাও সংহতি জানান এবং খানিকটা হাঁটেন।
এ সময় শিক্ষক হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জেলায় মোট ২৬টি প্রতিবন্ধী স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলার সাজিউড়া অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন তিনি। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে বুদ্ধি, বাক, দৃষ্টি, অটিজম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মিলিয়ে মোট ১৬৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের শিক্ষাদানে রয়েছে ১৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারী।
২০ শতক জমিতে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হিসেবে থেকে লেখাপড়া করছে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীর সহায়তায় কোনো রকমে চলছে বিদ্যালয়টি।
এ সময় হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমপিওভুক্তির জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারি নিয়ম মেনে বহু আবেদন করা হয়েছে। কাজ হয়নি। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান স্কুলটির দৈন্যদশা ও এমপিওভুক্তিকরণের বিষয় তুলে ধরে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সংসদে ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড কথা বলেছেন।
“২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালক-৭ আল মামুন মুর্শেদ স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের বরাবরে। এতেও স্কুলটির এমপিওভুক্তকরণ হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এ অবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা এসেছে। তাদের খুব কষ্টে জীবন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের এই দৈন্য তুলে ধরার জন্য এবং স্কুলটি যাতে ভবিষ্যতে এমপিওভুক্ত হয় শেষ ভরসা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই অনুরোধ জানাতেই আমি দেড়শ কিলোমিটার হাঁটা শুরু করেছি।”
প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটার হেঁটে সাত দিনে তিনি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করেন এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নেত্রকোণা জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুর রব খান ঠাকুর বলেন, “জেলায় থাকা মোট ২৬টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের মধ্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু পত্নীর নামে থাকা কামরুন্নেছা আশরাফ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি একমাত্র এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমরা চাই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এমপিওভুক্ত করা হোক।”
“২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমান অনেক কষ্ট করে স্কুলটি চালাচ্ছেন। সরকারি নীতিমালার সবকিছুই এই বিদ্যালয়ের রয়েছে। আমরা হাবিবুর রহমানের এই পদযাত্রার শুভ কামনা করি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎলাভের মাধ্যমে স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই আশা পূরণ হবে।”
নেত্রকোণা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া বলেন, “আমরা চাই, হাবিবুর রহমান যে উদ্যোগটা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে সেটা সফল হোক। প্রধানমন্ত্রী যেন বিষয়টা হস্তক্ষেপ করেন। সাক্ষাতের যেন একটা ব্যবস্থা করেন।”
আটপাড়া উপজেলার কাচুটিয়া সৈয়দ আলী আকবর অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবীর বলেন, “দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে যে যাত্রা শুরু করেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী যেন উনার আবেদনটা হস্তক্ষেপ করেন এবং সফলতা দেন।”