“এই বাইচের কোন আয়োজন করা হয় না। দেওয়া হয়না পুরস্কার। তারপরও শত শত মানুষ বাইচে অংশ নিতো।”
Published : 17 Sep 2024, 10:20 PM
“সেই ছোটবেলা থেকে এখানে নৌকা বাইচ হইতে দেখছি। এবার হইলো না। আমাগো হাসিনা নাই, তাই এবার কেউ নৌকা লইয়া এইহানে বাইচ দিতে আইসে নাই।”
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ঘাঘর নদীর কালীগঞ্জ বাজারে প্রায় দুইশ বছর ধরে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচটি এবার হচ্ছে না। সে কারণে কোটালীপাড়ার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমরিয়া গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী মালতী বিশ্বাস আক্ষেপ করে এ কথা বলেন।
সরকার পতনের সঙ্গে বদলে গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র। যেখানে প্রতিদিনই রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এ উপজেলার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দিন কাটতো; সেখানে এখন আর তাদের দেখা মিলছে না। অনুষ্ঠিত হচ্ছে না কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান।
নৌকা বাইচ দেখার জন্য প্রতি বছর কোটালীপাড়ার উপজেলার আশপাশের কয়েকটি জেলা, উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘাঘর নদীর কালীগঞ্জ বাজার এলাকায় ভিড় জমায়। এ বছরও হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচটি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তাদের ‘মনঃক্ষুণ্ন’ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের সুধির বাগচী (৬০) বলেন, “আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে বিশ্বকর্মা পূজার দিনে নৌকা বাইচ দেখতে আসি। এ বছরও দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু বাইচ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছি। আমরা চাই ঐতিহ্যে লালিত দুইশ বছরের এই নৌকা বাইচটি যেন এখানে অনুষ্ঠিত হয়।”
কলাবাড়ি গ্রামের এক বাচারি নৌকার মালিক বলেন, “এখানে নৌকা বাইচ মিলাতে কারও আয়োজন করতে হয়না। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে বাচারি নৌকা নিয়ে বাইচে অংশ গ্রহণ করে। এ বছর আমাগো নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নাই। আমরা তারে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানাই। তাই মন ভাল নেই। অনন্দ নেই। নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসি নাই। আমাগো নেত্রী দ্যাশে ফিররা আইলে আবার আমরা এই নদীতে আনন্দের সঙ্গে বাইচ দেবো।”
কলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, “প্রায় দুইশ বছর ধরে এখানে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। এই বাইচের কোন আয়োজন করা হয় না। দেওয়া হয়না কোন পুরস্কার। তারপরও শত শত মানুষ বাচারি নৌকা নিয়ে বিগত বছরগুলোতে এখানে বাইচে অংশ নিতো।
“এই বাইচ দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে উপস্থিত হতো। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এলাকায় মেলা বসতো। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে থাকতো উৎসবের আমেজ।
কিন্তু এবছর কেন এরা নৌকা নিয়ে বাইচ দিতে আসেনি তা আমার জানা নেই।”