ফেনীতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং, ‘তোয়াক্কা নেই’ জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের

“ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে, ঘরে তো কিছু থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে।”

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 07:12 AM
Updated : 14 May 2023, 07:12 AM

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হলেও তাতে ‘আগ্রহ নেই’ ঝুঁকির মধ্যে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের।

উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে তিনটি লাল পতাকা টাঙিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেত দেখানো হচ্ছে, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মাইকিং করে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে; কিন্তু এখনও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খালিই পড়ে আছে।

রোববার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে কেবল কিছু গবাদিপশুকে এনে রাখা হয়েছে, নেই মানুষজন।

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে উপজেলার জেলেপাড়ার বাসিন্দা মনমোহন জলদাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলেরা সারা বছর ঝড়-তুফানসহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে নদী ও সাগরে গিয়ে মাছ ধরে। এখন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় তারা উপকূলে বাড়িতে নিরাপদে রয়েছে।

“আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তেমন লাভ নেই। তাছাড়া সেখানে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হবে বলে মনে করছেন তারা।”

ঘূর্ণিঝড়ের অতীত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে চর খোন্দকার এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন জলদাস বলেন, “৬৫ বছর বয়সে কত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি, এসবে আমরা ভয় পাই না। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে, ঘরে তো কিছু থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে।

“বাড়ির পাশের নদীর তীরে নৌকা-জালসহ লাখ টাকার সম্পদ পড়ে আছে। এসব ছেড়ে তো অল্প কটা চিড়া-মুড়ির জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারি না।”

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ কথা জানিয়ে জেলেপাড়ার বাসিন্দা মহারানি জলদাস বলেন, “সেখানে থাকার জন্য নারীদের জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা নেই, তাই ঘরেই ভালো। পানি না ওঠা পর্যন্ত আমরা বাড়িতে আছি।”

ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ রোববার সকাল ৯টা থেকে বঙ্গোপসাগরের বক্ষের প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফের শেষাংশের দিকে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। সাগরও উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে শনিবার রাত থেকেই সোনাগাজীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সোনাগাজীতে ৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং উপজেলার সব বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে এবং ১৪টি চিকিৎসক দল, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচি বা সিপিপির দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন।”

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সোনাগাজীর জেলেপাড়াসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করতে সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মুনীর চৌধুরী।

“প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যরা জনগণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্তক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের দুর্যোগকালীন নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।”