গাজীপুরে অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

অবরোধের কারণে দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা এবং পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2023, 12:48 PM
Updated : 14 Feb 2023, 12:48 PM

গাজীপুর মহানগরীর সালনার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার সোয়া সকাল ১০টার দিকে সালনা এলাকার নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। 

স্থানীয়রা জানান, কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর অবরোধের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলে দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা এবং পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন।

নাসিরুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শান্তা বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। কোনো শিক্ষার্থীর বেতন এক মাস বাকি থাকলে ক্লাস থেকে বের করে দেন তিনি। কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে সমাধান করেন না। অভিভাবকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন ওই অধ্যক্ষ।

“অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের ভেতরে বহিরাগত মাস্তান দিয়ে আমাদের কলেজ শাখার এক বড় বোন ও বড় ভাইকে মারধর করেন তিনি। এর প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে আমাদের স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়।” 

অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।

এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পুরোনো কাগজ বিক্রি টাকা তছরূপ, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাইড বই সিলেকশন করে টাকা নেওয়ার মতো নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রনি অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিগত কমিটির কাছ থেকে নানা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং অবৈধভাবে কলেজের বেতন দ্বিগুণ-তিন গুণ বাড়িয়েছেন। 

“দীর্ঘদিন ধরে আমরা অধ্যক্ষের বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এজন্য বাধ্য হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছি। তার বিষয়ে বা স্কুল কলেজের কোনো অভিযোগ করলেই তিনি রুমে ডেকে নিয়ে আমাদের অপমান করেন।” 

একই দাবিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারিও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ  করেছিল।

তখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছিলেন, “সম্প্রতি নির্বাচনের মাধ্যমে কলেজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা বোর্ডে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত পক্ষের লোকজন ওই কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের উস্‌কে দিচ্ছে এবং তাদের মহাসড়কে নামিয়ে দিয়েছে।” 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অধ্যক্ষকে কলেজ থেকে গাজীপুর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে বেলা সোয়া ১২টার দিকে মহানগর, হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। 

গাজীপুর সদর থানার ওসি মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, কলেজে অধ্যক্ষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকায় আন্দোলন চলাকালে তাকে সসম্মানে কলেজ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা থানা চত্বরেও অবস্থান করছে। এর আগে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়েছিল।

ওসি বলেন, বিষয়টি নিয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক/তার প্রতিনিধি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কমিটির এক সদস্য জানান, আন্দোলনের পেছনে কয়েক শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন। অধ্যক্ষকে সরিয়ে কলেজের জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষককে অধ্যক্ষের আসনে বসানোর পাঁয়তারা করছেন তারা। এ কাজে শিক্ষার্থীদেরও উস্কে দিচ্ছেন তারা। 

সম্প্রতি উচ্চ আদালতে নতুন কমিটির বিরুদ্ধে রিট হলে শিক্ষা বিভাগ একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে দেয়। অ্যাডহক কমিটিতে সভাপতি হলেন গাজীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মোরাদ আলী।  

ইউএনও মোরাদ আলী সাংবাদিকদের জানান, “এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে কমিটি সেগুলো খতিয়ে দেখবে। এর আগ পর্যন্ত তিনি কলেজে যাবেন না।” 

আরও পড়ুন

Also Read: গাজীপুরে অধ্যক্ষের বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, যানজটে দুর্ভোগ