সিলেটে সম্পদে নজরুল, শিক্ষায় আনোয়ারুজ্জামান ও মাহমুদুল এগিয়ে

জাতীয় পার্টির নজরুলের বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা; তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার।

বাপ্পা মৈত্রসিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 03:04 PM
Updated : 24 May 2023, 03:04 PM

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে যারা লড়ছেন তাদের মধ্যে সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল।

নির্বাচন কমিশনে মেয়র প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী বাবুল সম্পদে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে নৌকার প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। এ দুজনই স্নাতক ডিগ্রিধারী।

সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। মোট ১১ জন মেয়র পদে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন- মো. আবদুল হানিফ, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান খান, সামছুন নূর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন, জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহ জাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।

এদের প্রত্যেকের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ সম্পদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার তথ্য।

প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টির নজরুল পেশায় একজন ব্যবসায়ী।

স্বশিক্ষিত এই ব্যবসায়ীর বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিএমডব্লিউ ও একটি টয়োটা প্রাডো গাড়ি, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কভার্ড ভ্যান এবং একটি মোটরসাইকেল।

নজরুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষি-জমি, একটি ফ্ল্যাট, চারটি দালান ও টিনশেড বাড়ি। পাশাপাশি তার ঋণও আছে ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকার। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে আছে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ।

নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা মামলা তদন্তাধীন। অতীতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিএ (সম্মান) পাস। আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীও পেশায় ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে নেই কোনো ফৌজদারি মামলা।  

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যবসায়ীর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি), এক সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে।

আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ বিঘা কৃষি জমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি ফ্ল্যাট। কোনো কোনো দায়-দেনা নেই এই প্রার্থীর। আর তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস। তবে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অন্য ব্যবসা।

এই প্রার্থী হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতীতে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা হলেও তা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। মাহমুদুল হাসানের কোনো দায়-দেনা নেই।

অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার।

হলফনামার এসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের (সিটি-নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলফনামায় কেনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না। কমিশনে জমা হওয়া প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই-বাছাই করে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ৪৬৬টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিপরীতে শেষ দিনে জমা পড়েছে ৩৮৭টি। এর মধ্যে মেয়র পদে ১১ জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে ৯৪ জন কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনলেও জমা দিয়েছেন ৮৯ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দিয়েছেন ২৮৭ জন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী বদর উদ্দিন কামরান, ২০০৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হন।

২০১৩ সাল থেকে মেয়র পদে আছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তবে এবার তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।