মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক শেষে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
Published : 23 May 2024, 09:42 PM
বরিশালের কাউনিয়ায় বিসিক শিল্পনগরীতে জুতা তৈরির এক প্রতিষ্ঠানে বকেয়া বেতন নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রাবার বুলেটে বিদ্ধ পাঁচজনসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে শিল্পনগরীর ফরচুন সুজ লিমিটেডের কারখানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান।
আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিকরা হলেন- উজিরপুরের নারায়ণপুর এলাকার হানিফ সরদারের ছেলে মেহেদি (২৫), বাবুগঞ্জের রহমতপুর এলাকার মো. মোস্তফার ছেলে রাজিব (২৫), স্বরুপকাঠির মো. শাসুদ্দোহার ছেলে তামিম (২০), নলছিটির গোবিন্দপুর গ্রামের মো. খোকনের ছেলে রাফসান (২০) ও গাইবান্ধার রসুলপুরের মিজানুর রহমান (২০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে ফ্যাক্টরি সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের লাঠিপেটা শুরু করে ও রাবার বুলেট বর্ষণ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে রাখা বাস ও কভার্ড ভ্যান ভাঙচুর করেছে। কারখানার বাইরের দিকের জানালার কাঁচও ভাঙচুর করা হয়েছে।
ফরচুন সু কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিক হাফিজুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের আধা মাসের বেতন দেছে। শ্রমিকরা বলছে ফুল বেতন লাগবে। কর্তৃপক্ষ বলছে- এ মাসে না, পরে দেখা যাবে।
“এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা শ্রমিকদের মেরেছে। আমরা প্রতিবাদ করলে আনসাররা গুলি করেছে। সকল শ্রমিকদের মারধর করেছে।”
হাফিজুলের দাবি তিনটি কারখানার অন্তত দুইশ’ শ্রমিক আহত হয়েছেন। কিন্তু ফরচুন সু কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানের ভয়ে অনেকে হাসপাতালে আসেননি।
শ্রমিক নিপা হালদার বলেন, কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে তাদের আনসার ক্যাম্পে ধরে এনে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে।
ফ্যাক্টরির সামনে অবস্থান নেওয়া আরেক শ্রমিক আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত মাসের বেতন এখন পর্যন্ত পাই নাই। আজ হাফ বেতন দেছে। একটা মানুষ কেমনে চলে। তারপর শ্রমিকরা বাইরে বের হইছে। আনসাররা লাঠিচার্জ করছে। রাবার বুলেট মারছে।”
একটি কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, ফ্যাক্টরিতে কেউ নেই। যা ভাংচুর করেছে বাইরে করেছে। ভিতরে কিছু ভাংচুর করেনি। আনসার সদস্যরা নিরাপদে রয়েছে।
কারখানাটির সামনে থাকা নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফরচুনের বাইরের সাথে ব্যবসা। বাইর থেকে টাকা পেয়ে বেতন দেয়। বেতন ভাতা লইয়া একটা ঘটনা ঘটছে। ১৫ দিনের বেতন দেছে। ওই টাকা দিয়ে কি করবে। বেতন ঠিক মতো না দেয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছে।”
কাউন্সিলরের অভিযোগ, শ্রমিকরা ঠিকমতো বেতনও পায় না, বোনাসও পায় না। তাদের ওভার টাইমও দেওয়া হয় না।
মহানগর পুলিশের কাউনিয়া থানার ওসি আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান আহত হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত আছে।”
এদিকে সন্ধ্যায় ফরচুন সুজ কোম্পানির শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই।
সন্ধ্যার পর মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে সমস্যা সমাধানের বৈঠক শেষে বেরিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
মনদীপ ঘরাই সাংবাদিকদের জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এপ্রিল মাসের বেতন অর্ধেক বেতন কারও অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। মালিক পক্ষের সাথে অনেকক্ষণ ধরে আলাপ করি। তারা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যেকের গত মাসের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও বলেন, শ্রমিকদের একটা দাবি ছিল- তাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা খারাপ ব্যবহার করেন। সেই ব্যক্তিদের নাম নিয়ে মালিককে বিষয়টি জানালে তাদের তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনার পিছনে যাদের দায়ী করা হয়েছে, আনসারের তাদের কারও নাম বলতে পারেননি শ্রমিকরা। এটা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের চিকিৎসার খরচও মালিক বহন করবেন বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
এসব বিষয়ে জানতে ফরচুন সুজ কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।