বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি বলেন, “শিক্ষার্থীদের ব্লকেডের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়েছে, সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
Published : 10 Feb 2025, 06:55 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি বাতিলের দাবিতে একাংশের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা টানা এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় দুইদিকে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সাড়ে ৪টা থেকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ ছেড়ে দেয়। তখন উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকামুখি এবং ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলমুখি যানবাহন সেতু পারাপার হয়।
কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে দুইপাশে আবারও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বলে জানায় সেতু কর্তৃপক্ষ।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। এরপর ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবারও অবরোধ শুরু করেছে। এ কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়েছে। সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
শিক্ষার্থীরা জানায়, শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে ২৮৪ সদস্যবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্যসচিব, ইকবাল হোসেন রিপনকে মুখ্য সংগঠক এবং টি এম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। এরপর থেকে এ কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
কমিটি ঘোষণার পরদিন রোববার সিরাজগঞ্জ শহরে পদবঞ্চিত মুন্তাসির মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সংবাদ সন্মেলন করে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মুন্তাসির মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, “ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা অনেকেই কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন।”
এরপর একই দাবিতে বিক্ষুব্ধরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বরে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে, এদিন বিকালে কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে শহরে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
পাশাপাশি পদ বঞ্চিতদের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হলরুমে সংবাদ সন্মেলন করেন কমিটির নেতারা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক সজীব সরকার বলেন, “আগামী ছয় মাসের জন্য জেলা, নয়টি উপজেলা ও থানার সমন্বয়ে জেলার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির উপজেলা, থানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করবে। এরপর সন্মেলনের মাধ্যমে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।”
তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। সরকার পতনের পর সবাই যার যার সংগঠনে ফিরে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে চাইলে অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। যারা পদ বঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই দুই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
“এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তারাও কমিটিতে পদ পাননি। পাশাপাশি কিছু ছাত্র প্রতিনিধি বাদ পড়েছেন যারা উপজেলা, থানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক কমিটিগুলোতে স্থান পাবেন।”
কমিটি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনো সংগঠনের কমিটি বাতিলের জন্য মহাসড়ক অবরোধ হাস্যকর। তারা নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে, যা অনভিপ্রেত। এটা যারা করছে আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের ট্যাগের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। প্রমাণ করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই অবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থীদের একাংশ সোমবার বিকালে আবার বঙ্গবন্ধু পশ্চিম সেতু গোলচত্বরে আবার অবরোধ করেন।
এ সময় মুন্তাসির মেহেদী হাসান বলেন, “জেলা কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যমূলক পকেট কমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ঘোষিত কমিটি থেকে ৫৩ জন পদত্যাগ করেছে। যার কপি দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে।”
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলে প্রমাণ দিতে হবে। শুধু মুখে অভিযোগ করলে হবে না।”
‘মহাসড়ক ব্লকেড’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যের বিষয়টি আমরা অবগত করার চেষ্টা করেছি। কেউ তাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় মহাসড়ক ব্লকেড করেছেন পদ বঞ্চিতরা। এতে হাস্যকর কিছু নেই।”