১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৪৮০ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
Published : 16 Jun 2024, 04:25 PM
স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যে সংখ্যক যাত্রী পারাপার করে ঈদের ছুটিতে তা দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারত ভ্রমণে যাচ্ছেন। স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটার উদ্দেশেও দেশ ছাড়ছেন অনেক মানুষ।
রোববার সকালে বেনাপোল চেকপোস্টের আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে পুলিশ, আনসার ও বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রী সংখ্যা ১০ জুন থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে। ১২ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৪৮০ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে।
“এর মধ্যে ভারতে গেছেন ২০ হাজার ১৩৭ জন এবং ভারত থেকে এসেছেন ১০ হাজার ৩৪৩ জন।”
আর শনিবার বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ৭ হাজার ৫৮৯ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮৫ জন ভারত গেছে; ২ হাজার ৫০৪ জন ফিরেছে বলে জানান তিনি।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার যাত্রী পারাপার হলেও এখন সেটা বেড়ে অন্তত ৭-৮ হাজার হয়েছে জানিয়ে ওসি আজহারুল বলেন, “আগে ইনকামিং ও আউটগোয়িং যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান থাকলেও এখন আউটগোয়িং যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।”
বেনাপোল চেকপোস্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্টের কাজ শেষ হলেও ভারতীয় চেকপোস্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। ওপারের ইমিগ্রেশনের কাজ ধীরগতির কারণে এ দীর্ঘলাইন এমন অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে ভারতীয় কাস্টমস, মেইন গেট, নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কয়েকটি গোলাকার লাইন পেরিয়ে আশপাশের মাঠ ছাপিয়ে গেছে লাইন। অনেক রোগীকে রাস্তার ওপরই বসে থাকতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।
ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রী নারায়ণগঞ্জের লিটন সাহা বলেন, “বেনাপোল ইমিগ্রেশনে বরাবরই সকালের দিকে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। এখানে বন্দর ব্যবহারের জন্য আলাদা সার্ভিস চার্জ (পোর্ট ট্যাক্স) নেওয়া হলেও মানুষকে বসতে দেওয়া তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী পেশাজীবী মানুষ বিভিন্ন কাজে কলকাতা যায়।
“খোলা আকাশের নিচে রোদ বৃষ্টির মধ্যেই রোজ হাজার হাজার মানুষকে পার হতে হয়।ইমার্জেন্সি চেক ইন করার জন্য গেটের বাইরে আলাদা একটা কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখা দরকার।”
ভারতগামী আরেক পাসপোর্ট যাত্রী বরগুনার আশিষ মৃধা বলেন, “বেসরকারি একটি কলেজে চাকরি করি; তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় পাই না। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি।
“ভারতে কয়েকজন আত্মীয় আছেন এ সুযোগে তাদের সঙ্গেও দেখা হবে; বেড়ানোও হবে।”
চিকিৎসার জন্য পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যাচ্ছেন মহাদেব কুমার। নানা কাজের ব্যস্ততায় সময় করে উঠতে না পারলেও ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়েছেন।
মহাদেব বলেন, “চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরবো বলে ঠিক করেছি।”
ভারত থেকে ফিরেছেন ইকবল হোসেন, রেজাউল করিম, গৌউর পদ পাল ও মিন্টু হোসেন। তাদের প্রত্যেকেই ভারত থেকে কিছু কেনাকাটা করে ফিরেছেন বলে জানান ।
ইকবল বলেন, “ওপারে একটু বেড়িয়ে আসলাম আর কোরবানির ঈদ তো, তাই কিছু মসলা কেনাকাটা করলাম।”
কি কি কিনেছেন জানতে চাইলে ইকবল বলেন, “প্রত্যেকটি মাল কিনেছি পাঁচ প্যাকেট করে। জিরা ৫০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট নিয়েছে ২০০ রুপি, কিসমিস প্রতি ৫০০ গ্রামের প্যাকেট নিয়েছে ৯৮ রুপি, কাজুবাদাম ৫০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট নিয়েছে ২২০ রুপি।
“এছাড়া চিনি প্রতি কেজি ৪৮ রুপি করে নিয়েছে। এছাড়া পরিবারের সবার জন্য কিছু কাপড়-চোপড় তো আছে।”
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আজহারুল বলেন, “যাত্রীদের সেবায় ইমিগ্রেশনে আমাদের লোকজন একটানা কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে না আশা রাখি।
“পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য ইমিগ্রেশনে নজরদারি করা হচ্ছে।”
একই সঙ্গে যাত্রীসেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. রেজাউল করিম বলেন, “ভারত গমনকারী প্রত্যেক পাসপোর্ট যাত্রীদের বর্তমানে এক হাজার টাকা 'ভ্রমণ কর' এবং ৫৫ টাকা ‘পোর্ট কর' পরিশোধ করতে হয়।
“এর মধ্যে ভ্রমণ কর সোনালী ব্যাংকে বা অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
এতে প্রতিবছর বেনাপোল স্থলবন্দরে ভ্রমণ খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় এবং পোর্ট ট্যাক্স খাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।