কমছে ছনখলা, শিকারীর ফাঁদে বিপদে মুনিয়া

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগান এলাকা থেকে ১১টি জীবিত এবং ১১ জবাই করা মুনিয়া পাখি উদ্ধার করা হয়।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2023, 01:36 PM
Updated : 1 April 2023, 01:36 PM

একদিকে কমে যাচ্ছে ছন ক্ষেত; অপরদিকে দৌরাত্ম বেড়েছে শিকারীদের- দুইয়ে মিলে বিপদের মুখে ছোট্ট পাখি মুনিয়া।

মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে এক সময় প্রচুর ছন ক্ষেত (ছনখলা) ছিল। চা শ্রমিকরা নিজেদের আবাসনের জন্য তা ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন তা কমে গেছে। এই ছনখলাই মুনিয়াদের প্রধান আবাস বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞরা।  

এই ছনখলাকে কেন্দ্র করেই শিকারিরা ফাঁদ পেতে রাখে। তাতে ধরা পড়ে মুনিয়া। পরে তা বিক্রি করা হয় বাজারে। এভাবেই দিনে দিনে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ছে মুনিয়া পাখি।

শুক্রবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বনবিভাগ ও পরিবেশবাদী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফের (এসইডব্লিউ) একটি দল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগান এলাকা থেকে ১১টি জীবিত এবং ১১ জবাই করা মুনিয়া পাখি উদ্ধার করে।

এ সময় আনসার আলী (৫০) নামে ব্যক্তিকে আটক করে বন বিভাগ। পালিয়ে যায় আরও দুজন। আনসার আলী উপজেলার কানাইদাশী গ্রামের মৃত তাজ বক্সের ছেলে।

শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল আলম শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতেই মামলা দিয়ে পাখি ও আসামিকে কমলগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জীবিত পাখিগুলোকে অবমুক্ত করে মৃত পাখিগুলোকে পুলিশের উপস্থিতিতে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবিদ ও পাখিপ্রেমী সিতেশ রঞ্জন দেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুনিয়া খুবই ছোট পাখি। এর ওজন সর্বোচ্চ ১৫ গ্রাম হবে। এই পাখির কতটুকুই আর মাংস। এটাও শিকার করে খেতে হয়! এই শিকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

পাখিপ্রেমী খোকন সিংহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কুরমা চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনের ছনখলায় এবং ঝোপঝাড়ে মুনিয়াসহ বিভিন্ন রকমের পাখি রয়েছে। এটি বিপন্ন মুনিয়া পাখির আবাসস্থল। মুনিয়া ছোট পাখি। এরা ছনখলায় বসবাস করতে পছন্দ করে। ছনখলার গোড়ার ভিতরে এরা ডিমপাড়ে এবং বাচ্চা ফোটায়।

এখানে মুনিয়া দেখতে এসেছেন পাখিপ্রেমী ইনাম আল হকও।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুনিয়া ছোট প্রজাতির পাখি। এরা ফসলের মাঠ, ছনখলা, নলখাগড়ার বন ও ঝোপে বসবাস করে। এরা চলাচল করে ঝাঁকে ঝাঁকে। কিন্তু চা বাগান কর্তৃপক্ষ এই ছনখলা পরিষ্কার করে ক্রমশ চা বাগান বর্ধিত করছেন।

“এভাবে আবাসন হারালে বিপন্ন হতে পারে মুনিয়ারা।”

সরজমিনে দেখা যায়, কুরমা চা বাগানের মুনিয়াদের আবাসস্থলের অর্ধেক এর মধ্যেই প্ল্যান্টেশন হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুরমা চা বাগানের ছনখলায় প্রচুর মুনিয়া পাখি রয়েছে। এখানে চা বাগান বর্ধিত না করার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর পরও তারা ছনখলা কেটে চারা বাড়ি করেছেন। পরে বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”