২০১৮ সালের ২৬ জুন রাতে চকের মধ্যে উল্টো করে পুঁতে রাখা অন্তরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
Published : 27 Mar 2024, 03:01 PM
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর নামে এক স্কুলছাত্রকে হত্যার দায়ে তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া এ মামলায় আরও তিনজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায়ও এসেছে।
বুধবার দুপুরে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্বপন কুমার পাল জানান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-নগরকান্দার চরমানিকদি গ্রামের হাবিব বেপারির ছেলে মাহাবুব আলম, পিপরুল গ্রামের আলতাফ মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুকার ও দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের মোবারক মাতুব্বরের ছেলে খোকন মাতুব্বর।
তাদের প্রত্যেককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন- পাগলপাড়া গ্রামের দুলাল শেখের ছেলে আশরাফ শেখ ও আজিজুল শেখ এবং দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে সুজন মাতুব্বর।
তাদের প্রত্যেককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭ ধারায় ১৪ বছর এবং ৮ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
এছাড়া দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আজিজুল শেখ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর পুলিশের পাহারায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদী পাগলপাড়া গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসেনের ১৪ বছর বয়সী ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরকে ২০১৮ সালের ৭ জুন রাতে অপহরণ করা হয়। ৮ জুন অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করেন।
ওই রাতেই অপাহরণকারিরা তার মোবাইলে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ১৪ জুন পুলিশের উপস্থিতিতে একটি ইরিব্লকের মেশিনঘরে টাকা রেখে তাদের নগদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরদিন অন্তরের মা ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে নগরকান্দা থানায় অপহরণ মামলা করেন।
এরপর ২২ জুন ফরিদপুর প্রেসক্লাবে অন্তরের পরিবারের সংবাদ সম্মেলন করে। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় এ খবর ছবিসহ ছাপা হয়। ২৪ জুন যে মোবাইল নম্বর থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল, সেটির মালিক মাহবু্ব আলম ও তার ভাই জুবায়ের বেপারিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৬ জুন রাতে পুলিশ চকের মধ্যে উল্টো করে পুঁতে রাখা অন্তরের লাশ উদ্ধার করে।
তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর নগরকান্দা থানার এসআই নিখিল চন্দ্র অধিকারী ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে এ মামলার বিচারকাজ শুরু করে আদালত।
এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত অন্তরের মা জান্নাতি বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই, এই রায় অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।”
আসামি পক্ষের আইনজীবী অনিমেষ রায় ও বিমল তুলশিয়ান এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।