“গত বছর এক কেজি সাইজের ইলিশ ছিল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা আর এবার সেই ইলিশ ১৯০০ টাকার উপরে; দাম কম হলে আরও কিনতাম”, বলেন এক ক্রেতা।
Published : 14 Oct 2024, 12:17 AM
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার রাত ১২টা থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন নদ-নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর নিষেধাজ্ঞার আগের রাতে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের বাজারে বসেছিল ইলিশের মেলা।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেলায় প্রায় দুই কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে বলে দাবি আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের।
শহরের পুরানবাজার মাছের আড়ৎ, মস্তফাপুর মৎস্য ভাণ্ডার ও রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ইলিশ বেচা-কেনার মহোৎসব। আগামী ২২ দিন ইলিশের বাজারজাত বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে বলে দাবি মাছ ব্যবসায়ীদের।
সন্ধ্যার পর থেকে শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পুরানবাজার মাছের আড়তগুলোতে ইলিশ বিক্রির হাক-ডাক শুরু হয়। এতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সাইজের ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
ইলিশের মেলায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। রাত গভীর হলে পুরো মাছের আড়ৎ ও বাজারে তিল ধরনের ঠাঁই ছিল না। সেখানে মাছ আর মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের দাম বেশি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।
পুরানবাজারে পাঁচ কেজি ইলিশ কিনেছেন শহরের হরিকুমারিয়া এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হাসান।
তিনি বলেন, “২২ দিন ইলিশ পাওয়া যাবে না। তাই মাছ কিনতে এসেছি। তবে গত বছর এক কেজি সাইজের ইলিশ ছিল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা আর এবার সেই ইলিশ ১৯০০ টাকার উপরে। দাম কম হলে আরও কিনতাম।”
ইলিশের দাম ‘আকাশচুম্বী’ হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মাছ কিনতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, “আগে জানলে এ রাতের জন্যে দেরি করতাম না। এখন যে দামে ইলিশ কিনলাম, তা আগের চেয়ে আরও বেশি। মানুষ হুজুগে মাছ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমিও আসছি, এখন দাম দেখে আর কিনলাম না। আগামীতে আর এই ভুল করব না।”
একই চিত্র দেখা গেছে রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দর, বেপারীপাড়া মোড় ও মস্তফাপুর মৎস্য ভাণ্ডারে। সেখানেও শত শত মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। তবে দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তবে এ বছর পুরো জেলায় বেশ কয়েকটি বাজারে ইলিশ মেলায় দুই কোটি টাকার বেশি মাছ বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
পুরানবাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুজন বর্মন বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শনিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে। তাই সংগ্রহে থাকা সব ইলিশ বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
মেলায় যেমন ক্রেতা এসেছে, তেমন বিক্রিও হয়েছে; তবে গতবারের চেয়ে দাম একটু বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুর পুরানবাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোছলেম উদ্দিন বলেন, “প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার আগের রাতে ইলিশ বিক্রির ধুম পড়ে। সব মাছ ব্যবসায়ী সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি করেন।
“এ আড়তে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। আর টেহেরহাটেও প্রায় এক কোটি টাকা ইলিশ বিক্রি হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ইলিশ কেনা-বেচা করি না। তাই মানুষ এখন মাছ বেশি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।”
মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। তাই সারাদেশের মত মাদারীপুরেও ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় বন্ধ থাকবে।
এ সময়ের মধ্যে যদি কেউ আইন অমান্য করেন, তাহলে জেল-জরিমানা করার বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি।