বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি দেওয়া নিয়ে দুপক্ষের বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি রাজশাহীর এক সমন্বয়কের।
Published : 22 Nov 2024, 12:06 AM
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক ‘সমন্বয়ককে’ হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই দফা মারধরের শিকারের পর ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম।
আহত সোহেল রানা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি নিজেকে ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিতেন। তবে আন্দোলনের সময় রাজশাহী কলেজের কোনো সমন্বয়ক পরিষদ ছিল না বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। বৃহস্পতিবার সোহেল রানার পক্ষের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় এক সমন্বয়ককে রাজশাহীতে এনে কমিটি করার চেষ্টা করেন। তবে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলসহ সমন্বয়কদের অন্য পক্ষটি তা করতে দেয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর সমন্বয়ক আব্দুর রহিম বলেন, “একটি পক্ষ কেন্দ্রের একজন সমন্বয়ককে এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর কমিটি করার চেষ্টা করেছিল। ওই কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের বাড়ি রাজশাহী, তিনি ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই সমন্বয়ককে পিটুনি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সোহেলের ওপর কারা হামলা করেছে, তা জানি না।”
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ‘বহিরাগত’ বলে দাবি করেছেন আহত সোহেল রানা। তিনি বলেন, “প্রথমে বহিরাগতরা বিশৃঙ্খলা করে। পরে ছাত্রদল তার ওপর হামলা করে।”
চিকিৎসাধীন সোহেল রানা জানান, বিকালে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহীর পক্ষ থেকে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পরে সেটি কালেক্টরেট মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী তাকে ‘টার্গেট’ করছেন।
তিনি বলেন, “হামলার আশঙ্কায় মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন কয়েকজন আমাকে মারধর করেন। এরপর রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে আরেক দফা মারধরের শিকার হয়ে বিকল্প পথে হাসপাতালের দিকে রওনা দেই।
“রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে আবারও আমাকে রিকশা থেকে নামিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন পিটুনি দেন। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে আমাকে পিটিয়ে চলে যায়।”
সোহেল রানার দাবি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়েছেন।
রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “এটি মূলত সমন্বয়কদের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের ফল। সোহেলের ওপর হামলাকারীদের ছাত্রদল বলা হলেও আন্দোলনের সময় তো ছাত্রদলও ছিল। ছাত্রদল এখন পরে, আগে ওরা সমন্বয়ক।”
ওয়ালিদের দাবি, “এই ছেলেটা (সোহেল) আগে জাসদ ছাত্রলীগ করত। পরে সমন্বয়ক হয়ে গেছে। সে সুবিধাবাদী। এ জন্য তার ওপর আক্রমণ হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত আরও খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।”
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস জানান, সোহেল রানার শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন।
নগরের রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সমন্বয়কদের দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। একজন আহত বলে শুনেছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখব।”