মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
Published : 19 Sep 2024, 08:15 PM
সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনজন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্সসহ আটজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক নিঝুম রায় প্রান্ত বাদী হয়ে বুধবার সকালে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেন বলে বৃহস্পতিবার জানান ওই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট জুবায়ের বখত জুবের ।
মামলায় ওসমানী হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী সাদেককে প্রধান আসামি করা হয়েছে; যিনি হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব, হাসপাতালে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, ওসমানী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব, নিরাপত্তা প্রহরী আবদুল জব্বার ও সরদার মো. আবদুল হাকিম।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
আসামিদের মধ্যে ইসরাইল আলী একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
ঘুষ-প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা সংঘবদ্ধ দুর্নীতি চক্রের সদস্য। ইসরাইল, রওশন ও জব্বারের কাছে হাসপাতালের শত শত কর্মচারী জিম্মি।
তারা হাসপাতালের কর্মচারীদের জিম্মি, প্রতারণা, ঘুষ-বাণিজ্য ও টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ মালিক হয়েছেন। চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
আসামিদের অন্যায়, দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য, অনিয়ম, টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে বা আইনের আশ্রয় নিলে আসামিরা হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
আরও অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন, বেড, বারান্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন আসামিরা।
আসামিরা হাসপাতালে প্রতারণা, দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ, চুরি, বাটপারি, টেন্ডার বাণিজ্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ না দিয়ে দালালদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি, ওটি থেকে ওষুধ চুরি করে দালাল দিয়ে বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ আছে।
এতে হাসপাতালের সুনাম দিন দিন ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ইসরাইল আলীকে সাদেক জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স হয়েও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী এবং অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। ক্ষমতার দাপটে কাউকে তোয়াক্কা করেন না তিনি।
তার বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্য, যৌন হয়রানি, ভুয়া বিল করে উপ পরিচালকের নামে অর্থ আত্মসাৎ, করোনায় নার্সদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ আছে।
সিলেট শহরে ইসরাইল আলীর নামে ও দখলে ৬-৭টি বহুতল ভবন, স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আছে বলে মামলার অভিযোগে দাবি করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোগী পরিবহণ ও মাদক-আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার জন্য ইসরাইল আলীর নামে-বেনামে ৩৫ থেকে ৪০টি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এছাড়া মামলার এজাহারে বলা হয়, পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী দীর্ঘ ১০ বছর হাসপাতালে কর্মরত থেকে হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
ওসমানী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসানকে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্রের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যরাও একই চক্রের সদস্য হিসেবে হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওসমানী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।