উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও সংবাদিকতা বিভাগের সভাপতির কার্যালয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
Published : 01 Sep 2024, 08:05 PM
অনিয়ম-দুর্নীতি, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের অপসারণ দাবি করেছেন কিছু শিক্ষার্থী।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতির কার্যালয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক মুসতাক স্নাতক পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না এমন দাবি করে বিভাগের সভাপতির কাছেও দরখাস্ত দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসান অভিযোগপত্র জমা নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের বলেন, “অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করা হলো। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে অভিযোগপত্রটি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।”
অভিযোগপত্রে বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বলা হয়, “অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বিভাগের সভাপতির দায়িত্বকালীন (৫ মে ২০২১-৪ মে ২০২৪) বিভাগের বিভিন্ন তহবিল থেকে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার পর এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ে। বিষয়টি অবগত করে নতুন সভাপতি রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি এ টাকা বিভাগের তহবিলে জমা দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করে বিষয়টি ফয়সালা করলেও এখনো সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেননি। এতে স্পষ্টত হয়, তিনি ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও আইনবহির্ভূত।”
অভিযোগে বলা হয়, এ ছাড়া বিভাগের একাডেমিক সভার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে ভুয়া প্রত্যয়পত্র দেন এ অধ্যাপক। ওই প্রত্যয়ণপত্র দেখিয়ে পরে আসাদুল্লা-হিল-গালিব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের নেতাও হন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, “ছাত্রলীগ নেতা আসাদুল্লা-হিল-গালিব গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২ সেশনের সান্ধ্য মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার আবেদন করেন।
“ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ভুয়া সনদে’ গালিব ওই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিভাগের জরুরি সভায় ওই নেতার ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
“তবে জরুরি সভার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সভাপতি মুসতাক আহমেদ ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। তবে সেই দিনের তারিখের পরিবর্তে তিনি প্রত্যয়নপত্রে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট উল্লেখ করেন।”
এদিকে ওই অধ্যাপকের অপসারণের দাবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে একটি ব্যানারও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই অধ্যাপকের ব্যক্তিগত চেম্বারে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগও করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, “তিনি বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে রাতবিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ) মেসেজ করেন। যা সেই শিক্ষার্থীদের জন্য বিব্রতকর। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমরা এর বিবরণ এখানে দিচ্ছি না। প্রয়োজনে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত।”
এ ছাড়া লিখিত অভিযোগপত্রে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ তার ফেসবুকে ‘যৌক্তিক’ আন্দোলনের বিপক্ষে একের পর এক বিভিন্ন উসনিমূলক ও অনৈতিক ভাষায় পোস্ট দেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, “আগামীকাল একাডেমিক কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে শিক্ষকদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।”