বিআরটিসি বাস বন্ধ করল ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপ

বেসরকারি পরিবহন মালিকদের অনেকে জানেন না বিআরটিসি সব জায়গায় বাস চালাতে পারে; রুট পারমিট লাগে না – বিআরটিসি চেয়ারম্যান।

ফরিদপুর প্রতিনিধিজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 01:41 PM
Updated : 10 August 2022, 01:41 PM

মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ঢাকা-বোয়ালমারী রুটের বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের লোকজন।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এ ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে চালু হওয়ার একদিনের মধ্যেই ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাগামী রুটের বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, “কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই বোয়ালমারী থেকে বিআরটিসি বাসটি চলাচল শুরু করে৷ এ কারণে ভাঙ্গা এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে ওই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের সব জায়গায় বিআরটিসি বাস চালাতে পারে; রুট পারমিট লাগে না।

ফরিদপুরের পুলিশ খবরটি জানতে পারলেও কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিআরটিসি বাস কর্মচারীরা জানান, বোয়ালমারী পৌর বাস টার্মিনালের বিআরটিসি কাউন্টার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার ট্রিপের বাসটি সকাল ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ৪২ সিটের বাসটির সব সিট পূর্ণ ছিল।

বিআরটিসি বাসের স্টাফ তারিকুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার সামনে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশের আগমুহূর্তে তাদের গতিরোধ করা হয়। ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় এক-দেড়শ লোক মহাসড়কের উপর দাঁড়িয়ে তাদের বাসটি থামিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, “তারা বাসের চালক রাকিবুল ইসলামের উপর চড়াও হয়ে মারতে উদ্যত হয় এবং চাবি ছিনিয়ে নেয়। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় যাত্রীদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়।”

তারিকুল আরও বলেন, “যাত্রীদের ভাড়ার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আমরা ঢাকার দিকে চলে আসতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। বোয়ালমারী ফিরে আসতে চাইলেও দেওয়া হয়নি।”

তিনি বলেন, পরে বাস ড্রাইভার বলে যে তার বাড়ি মাগুরা। তিনি বাস নিয়ে মাগুরা ফিরে যেতে চান। পরে মাগুরা যাওয়ার শর্তে তাদের সেখান থেকে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।
“ফের এই পথে বাস চালালে হাত-পা কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তারা আমাদের বাসটি ছেড়ে দেয়,” বলেন বিআরটিসি বাসের স্টাফ তারিকুল।

এরপর তারা বাস নিয়ে মাগুরা যাওয়ার কথা বলে বোয়ালমারী চলে আসেন। ভাঙ্গা থেকে ফিরে বাসগুলো বোয়ালমারী এসে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবার বোয়ালমারী ছেড়ে যায়।

এদিকে বিআরটিসি বাস বন্ধ করে দেওয়ার খবর বোয়ালমারীতে পৌঁছালে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

মাত্র একদিন আগে, মঙ্গলবার বিকালে বোয়ালমারী-ঢাকা বিআরটিসি বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। প্রথম দিনে এই এসি বাসে যাত্রী ছিল পরিপূর্ণ।

যাত্রীরা জানান, বাস মালিক গ্রুপের নন এসি পরিবহনে পাঁচশ টাকা ভাড়া নিত। সেখানে বিআরটিসি এসি বাসের ভাড়া সাড়ে পাঁচশ। এতে যাত্রীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ফলে প্রথম দিনেই বাসগুলো যাত্রী বোঝাই হয়ে যায়।

ফরিদপুর জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, বিআরটিএ দক্ষিণ বঙ্গের ২৩ জেলায় পদ্মা সেতু হয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলের যে তালিকা দিয়েছে সেখানে কোনো উপজেলাভিত্তিক বাস চলাচলের অনুমতি নেই। আর ফরিদপুরে বিআরটিসির কোনো ডিপো নেই৷ এরা কুমিল্লা ডিপোর বাস এনে ওই ডিপোর ম্যানেজারের নামে লিজ নিয়ে বাস চালাচ্ছিল।

“এতে আমাদের বাস মালিক গ্রুপের বাস চলাচলে সমস্যা হবে। এ কারণে আমরা বাসের স্টাফদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড রেখে তাদের যাত্রী নামিয়ে বাসগুলো ফিরিয়ে দেই।”

বিআরটিসির ম্যানেজার অপারেশন (কুমিল্লা ডিপো) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “বিআরটিসি বাস বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার নেই জেলা বাস মালিক গ্রুপের। পরিবহন সেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই হিসেবে ওই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ করা ঠিক হয়নি।”
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “এ ধরনের একটা খবর জানতে পেরেছি; তবে কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি। বিআরটিসি বাসের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিষয়টি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।

“আমরা বাস সার্ভিস শুরুর পর দুয়েকটা জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বেসরকারি পরিবহন মালিকদের অনেকে জানেন না বিআরটিসি সব জায়গায় বাস চালাতে পারে। রুট পারমিট লাগে না। আজকের ঘটনাটি আমরা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।”

ওই গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল; ওই রুটে বাস চলাচল করবে কি না তা পরে জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।