একজন শ্রমিক বলেন, “লোডে বস্তা প্রতি মজুরি তিন টাকা এবং আনলোডে তিন টাকার দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘ দুই বছর থেকে।”
Published : 29 Jun 2024, 10:21 PM
মজুরির বৃদ্ধির দাবিতে নীলফামারীতে ধর্মঘট পালন করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন-বাফা গুদামের শ্রমিকেরা। শ্রমিকরা সার খালাস না করায় গুদামের ভেতরে ও বাইরে অর্ধশতাধিক ট্রাক আটকে থাকে।
শনিবার সকাল থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বাফার গুদামের সামনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালনের পর গুদাম কর্তৃপক্ষ ও সদর থানা পুলিশের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজ যোগ দেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, গুদাম চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতি বস্তা সার আনলোডে দুই টাকা ও লোডে এক টাকা করে মজুরি পান তারা। কিন্তু বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলেও তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
এসব বিষয়ে একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও কোনো ফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন গুদাম শ্রমিকরা।
বাফার নীলফামারী গুদামের শ্রমিক মো. রাব্বী বলেন, তিন বছর থেকে বাফার গুদামে শ্রমিকরা সার আনলোড ও লোড করে আসছেন। প্রতি বস্তা সার আনলোডে শ্রমিকদের দেওয়া হয় মাত্র দুই টাকা আর লোড করার জন্য দেওয়া হয় মাত্র এক টাকা। বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দরের তুলনায় এ পরিমাণ মজুরি অতি নগণ্য।
গুদাম শ্রমিকরা ট্রাক থেকে আনলোডে মজুরি বস্তা প্রতি তিন টাকা এবং লোডে তিন টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ দুই বছর ধরে। কিন্তু বাফার লোডিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরকার টেড্রার্স তাদের সেই দাবি মানছে না; শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসছে না।
ওই শ্রমিক আরও বলেন, তাই বাধ্য হয়ে তারা ধর্মঘট শুরু করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাদের।
বাফার গুদামের শ্রমিক সর্দার সায়েদ আলম বলেন, “প্রতি বস্তা তিন টাকা দরে সারাদিন কাজ করে শ্রমিকদের মাত্র দুই থেকে তিনশত টাকা আয় হয়; এ টাকায় সংসার চলে না। আমরা বহুদিন ধরে মজুরি বাড়ানোর জন্য তাগিদ দিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না।
“তাই বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে গুদাম কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিকাল তিনটার দিকে আনলোডের কাজ শুরু করি।”
এদিকে, শ্রমিক ধর্মঘটে ট্রাক থেকে সার খালাস না হওয়ায় গুদাম চত্বর এবং বাইরে নীলফামারী-ডোমার সড়কে অর্ধশত ট্রাক আটকা পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সার বোঝাই ট্রাকের চালকরা।
যশোরের নওয়াপাড়া থেকে সার নিয়ে আসা ট্রাকচালক মো. সেলিম কাজী বলেন, “সার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নীলফামারীতে এসে পৌঁছি। শুক্রবার ছুটির কারণে কাজ করেনি লেবাররা। এরপর শনিবার মজুরি বৃদ্ধি দাবি করে সকাল থেকে কাজ বন্ধ রাখে। এমন সমস্যায় প্রায় তিন দিন ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা।
“সময়মত খালাস না হওয়ায় প্রতিদিন হেল্পারসহ দুজন মানুষের খাওয়া খরচ হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। এ টাকা মালিক দিবেন না, পকেট থেকে খরচ করছি। আসার সঙ্গে সঙ্গে সার খালাস হলে অতিরিক্ত খরচ হত না।”
আরেক ট্রাকচালক আরজু ইসলাম বলেন, “আমরা নওয়াপাড়া থেকে দেশের বিভিন্ন বাফার গুদামে সার পরিবহণ করি। এর আগেও নীলফামারীতে এসেছি। কিন্তু এবার এসে বিপদে পড়লাম। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গুদামের শ্রমিকরা লোড-আনলোড বন্ধ রাখার কথা জেনেছি। এ কারণে গুদামের ভেতরে আনলোডের অপেক্ষায় অনেক ট্রাক আছে।
“আমরা ভেতরে জায়গা না পেয়ে সড়কে অন্তত ৫০টির বেশি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছি, জানি না কখন খালাস হবে। এভাবে সড়কে দাঁড়িয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রাতে পাহারা দিতে গিয়ে ঘুম হচ্ছে না। খাওয়া, শৌচাগারের সমস্যাতো আছেই।”
এ বিষয়ে লোডিং-আনলোডিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরকার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আনছার আলী বলেন, “মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শ্রমিকরা আমার সঙ্গে কখনো কোনো কথা বলেননি। গত শুক্রবার ছুটি থাকায় কাজ বন্ধ ছিল। আজকে সকালে হঠাৎ করে শুনি, তারা কাজ বন্ধ করেছে। আমি দূরে থাকায় ফোনে বলেছি, কোনো কথা থাকলে, আমরা বসে সমাধান করব, আপনারা কাজ চালিয়ে যান। এরপর কাজ শুরু করেছে তারা। এখন কোনো সমস্যা নাই, আনলোডের কাজ দ্রুত শেষ হবে।”
এ বিষয়ে নীলফামারী বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকরা কাজ করেন ঠিকাদারদের অধীনে। ঠিকাদারের বাড়ি দূরে হওয়ায় লেবার সর্দার শ্রমিকদের কাছে কিছু তথ্য গোপন রেখে ফায়দা নেয়।
“এ জন্য লেবার সর্দার এবং শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কাজ সচল রাখা হয়েছে।”