নিউ ইয়র্কে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেমিনার

‘স্বাধীনতার ৫০ বছর: বাংলাদেশের সংগ্রাম, সাফল্য ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে সেমিনার করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম যুক্তরাষ্ট্র শাখা।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2021, 07:08 AM
Updated : 8 Nov 2021, 07:08 AM

শনিবার নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ সভা থেকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন আলোচকরা। একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরটি বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর পেছনে আছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও আনন্দ-বেদনার ইতিহাস, বাংলাদেশের টিকে থাকা ও বৃদ্ধির ইতিহাস।” 

বক্তব্য দিচ্ছেন আবুবকর হানিফ

জাতিসংঘ পপুলেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ গবেষক সাজেদা আমিন বলেন, “কীভাবে আমরা উন্নয়ন পেয়েছি তা দেখতে হলে গভীর পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে। সত্তরের দশকে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর। এখন তা বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। সেসময় একজন নারী গড়ে ৬ সন্তান প্রসব করতেন। এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ২-এ। সেসময় শ্রম সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১০%-এরও কম। এখন তা ৪৬%। সেসময় পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল ৮৮%, এখনও একই হারে রয়েছে।”

সাজেদা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সর্বক্ষেত্রে আমাদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কারণ পাকিস্তানের মেয়েরা পিছিয়ে আছে। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে তৃতীয়। এসবই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্জন। তবে তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না যদি নারীর কর্মক্ষমতাকে মূল্যায়ন করতে সক্ষম না থাকি।

মানবাধিকার কর্মী পার্থ ব্যানার্জী কলকাতায় হাই স্কুলে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “দুই বাংলার মানুষের যৌথ লড়াই এখন জরুরি। কারণ ভারতে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট বাহিনী এবং বাংলাদেশে চরমপন্থী ইসলামি বাহিনী দুদেশেই স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা বিপরীত মেরুর শক্তি ছিল, এখন নব উদ্যমে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবনদর্শন ধ্বংস করে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের হাতে দাঙ্গা, ঘৃণা ও হিংসার রক্ত।”

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞ সুফিয়ান এ চৌধুরী বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর সমগ্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট। ১২ বছরের ব্যবধানে সেই তিন হাজার এখন ২৩ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

“চলমান উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার বাড়াতে হবেই। সেজন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, পৃথিবীর ২০০ দেশের মধ্যে মাত্র ৩৩টি দেশকে বলা হয় ‘মেম্বার অব দ্য নিউক্লিয়ার পার্ক’, যারা শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ যে চলতি শতাব্দীর উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলছে তা দৃশ্যমান হবে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৩ সালে চালু হবার পর।”

‘আই-গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র চ্যান্সেলর আবুবকর হানিফ বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনের উপযোগী কারিগরি শিক্ষার প্রচলন ঘটাতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির পাশাপাশি। বছর শেষে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন, কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন একেবারেই কম। তেমন ডিগ্রির কী প্রয়োজন আছে! উন্নত বিশ্বের কাতারে উঠতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে হবে।”

সেমিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মাহফুজ আর চৌধুরী ও ফকির ইলিয়াস। আলোচকদের আলোচনার ভিত্তিতে ফ্লোর থেকে বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভেটার্ন্স ইউএসএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মকবুল হোসেন তালুকদার এবং আমেরিকা-বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ সালাম তাদের মতামত জানান।

এর আগে সেমিনারের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে দেশের গান পরিবেশন করেন বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতনের শিল্পীরা। নেতৃত্বে ছিলেন আয়োজক সংগঠনের নারী সম্পাদক সবিতা দাস ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক উইলি নন্দি। সেমিনারের সমাপ্তী ঘটে রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসান ও শাহ মাহবুবের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গানে। তবলায় ছিলেন তপন মোদক। একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে নিজের লেখা গান শোনান সালেহা ইসলাম।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, মঞ্জুর আহমেদ, শাহজাহান মৃধা বেনু, গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, এনামুল হক, আব্দুর রহমান, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, মঞ্জুর আহমেদ, নাজিমউদ্দিন, এম এ আওয়াল, কাজী মনির, শামসুল আলম চৌধুরী, আবুল বাশার ভূইয়া, বিলালউদ্দিন ও আয়োজক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!