তুরস্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত ইস্তাম্বুল থেকে প্রায় ২০৪ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ছোট এক শহরের নাম কুতাহইয়া। এ শহরে অবস্থিত ডুমলুপিনার ইউনিভার্সিটি থেকে একচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসেবে আমি পুরো এক সেমিস্টার সম্পন্ন করি।
ডুমলুপিনার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই ইয়াসমিনের সাথে আমার পরিচয়। জেসমিন ফুলের মতো সে আমার জীবনে সুবাস ছড়িয়েছিল, তবে সে সুবাসকে আমি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারিনি। তুর্কি ভাষায় জেসমিনকে ইয়াসমিন বলা হয়।
ইয়াসমিনের পৈতৃক নিবাস ইস্তাম্বুলে, তবে উচ্চশিক্ষার সুবাদে সে কুতাহইয়াতে অবস্থান করতো। ডুমলুপিনার ইউনিভার্সিটি থেকে তখন তার স্নাতক শেষ হওয়ার পথে। ইউনিভার্সিটির ইরাসমাস স্টুডেন্ট কর্তৃপক্ষ ইয়াসমিনকে আমার জন্য মেন্টর হিসেবে নিয়োগ করে।
তুরস্কের সিংহভাগ মানুষ সে অর্থে ইংরেজিতে পারদর্শী নয়, এ কারণে তুর্কি ভাষা জানা না থাকলে বাইরে চলাফেরা করার সময় বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। পুরো এক সেমিস্টার ইয়াসমিন একজন ভলান্টিয়ার হিসেবে আমার দেখাশোনা করেছে। কোনও কোর্সে যদি কোনও সমস্যা হতো কিংবা ইমিগ্রেশন–সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলে, ইয়াসমিন সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য আমার পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করত।
এভাবে এক সাথে পথচলা শুরু, যদিও সে পথচলা খুব বেশিদিনের জন্য স্থায়ী হয়নি। ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসার অনুভূতিকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইয়াসমিনকে প্রথম দেখার সময় আমি সম্বিত হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেদিন আমাদের এক সাথে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। তুরস্কের টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করতে লোকাল ইমিগ্রেশন অফিসের যাওয়াটা আমার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল। ইয়াসমিন আমাকে হোয়াটস অ্যাপে টেক্সট দিয়ে রেখেছিল। দুপুরে জুমার নামাজের পর সে আমার জন্য মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করছিল। আমাকে দেখা মাত্র জড়িয়ে ধরে, এরপর আমার দুই গালে দুটো চুমু আঁকলো।
ইয়াসমিনের সৌন্দর্যে স্নিগ্ধতা রয়েছে। লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি অর্থাৎ আমার প্রায় সমান, গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা। তবে সে ফর্সার মাঝে আলাদাভাবে এক কোমলতার উপস্থিতি লক্ষ্য করছিলাম। নাকটা একটু লম্বা আর চুলগুলো একেবারে উজ্জ্বল কালো। এক কথায় বলতে গেলে, তুর্কি রমণীদের সৌন্দর্যের পুরোটা বিধাতা ইয়াসমিনকে ঢেলে দিয়েছেন।
পোশাকে ইয়াসমিন সব সময় সাধারণ- পরনে থাকতো হাফহাতা টি-শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট। তবে বৃষ্টি কিংবা ঠাণ্ডার দিনে টি-শার্টের ওপর হালকা ওজনের জ্যাকেট কিংবা কোট পরতো। ইয়াসমিন সব সময় খোলা চুলে থাকতে পছন্দ করতো। অতি সাধারণ পোশাকে একজন মানুষও যে অসাধারণ রূপে নিজেকে মেলে ধরতে পারে, সেটা কোনদিনও বুঝতাম না যদি না ইয়াসমিনের সাক্ষাৎ পেতাম।
বয়সের দিক থেকে অবশ্য ইয়াসমিন ছিল আমার চেয়ে এক বছরের বড়। কিন্তু ভালোলাগা কিংবা প্রেম তো আর বয়সের বাঁধ মানে না।
ইয়াসমিনের সাথে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গেলাম। কুতাহইয়া শহর থেকে অনেকটা দূরে এ অফিস। আগের থেকে ইয়াসমিন আমার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। আমার হয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে কথা বললো ও। ইমিগ্রেশন অফিসারের নির্দেশ মতো ইয়াসমিনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিলাম। অফিসার আমার হাতে এরপর একটা স্লিপ দিলেন।
এ স্লিপ ব্যবহার করে যেকোনও সময় তুরস্কের বাইরে অন্য যে কোনো দেশে যাতায়াত করা যায়। তবে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট ইস্যু হওয়ার আগে কেউ যদি অন্য কোনো দেশ ভ্রমণ করতে চান, তাহলে আগের থেকে লোকাল ইমিগ্রেশন অফিসকে জানাতে হয়, যাতে তুরস্কে ফেরার সময় পরে কোনও ঝামেলায় পড়তে না হয়।
ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে তিন মাস অপেক্ষা করার জন্য পরামর্শ দিলেন। তিনি জানালেন, রাজধানী আঙ্কারা থেকে রেসিডেন্ট পারমিট প্রিন্ট হয়ে আমার বাসার ঠিকানায় ডাক যোগে পৌঁছাতে তিন মাস সময় লাগবে।
ইমিগ্রেশন অফিসে যাবতীয় কাজ শেষে আমরা সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে আসলাম। বৃষ্টিস্নাত দিন। কুতাহইয়ার মারকাজে পৌঁছানোর জন্য বাস কিংবা ট্যাক্সির দেখা পেলাম না। খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। ইয়াসমিন হাঁটতে শুরু করলো, আমি তার পিছু পিছু।
কিছুদূর হাঁটার পর আমাদের দেখে এক আফগান তিন চাকার পিকআপ ভ্যান থামালেন। ততোক্ষণে পরনের জামা-কাপড় একদম ভিজে গিয়েছে। এরপর তুর্কি ভাষায় কিছু একটা বলতে আরম্ভ করলেন। ইয়াসমিন তার কথা শোনামাত্র ‘ইয়েই’ বলে উল্লাসে লাফ দিয়ে উঠল। বুঝলাম, তিনি আমাদেরকে তার পিকআপ ভ্যানের পেছনে ওঠার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
কুতাহইয়ার মূল শহরের মুখের অত্যাধুনিক শপিং মলে আমাদেরকে নেআমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে মারকাজের বাসে উঠে পড়ি। ইয়াসমিন আমাকে আমার ডরমেটরি পর্যন্ত পৌঁছে দিল। বিদায়লগ্নে এবার আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
এরপর ধীরে ধীরে ইয়াসমিনের সান্নিধ্যে আসা। বিদেশের মাটিতে পা রাখার পর সব সময় আমি ফ্ল্যাট বাসার পরিবর্তে স্টুডেন্ট হোস্টেলে থাকার চেষ্টা করেছি। তুরস্কেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। খরচ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে এমনটি করেছি তা বলা যাবে না, স্টুডন্ট লাইফে হোস্টেলে থাকার মজা আলাদা।
কুতাহইয়ার সিটি সেন্টার থেকে সামান্য কয়েক গজ হাঁটার দূরত্বে ছিল আমার হোস্টেলের অবস্থান। ইয়াসমিন থাকতো ইউনিভার্সিটির ডরমেটরিতে। কুতাহইয়ার সিটি সেন্টার থেকে ডুমলুপিনার ইউনিভার্সিটির দূরত্ব প্রায় সাড়ে এগারো মাইলের কাছাকাছি। জরুরী প্রয়োজনে ইয়াসমিন প্রায়ই সিটি সেন্টারে আসতো। সিটি সেন্টারে আসার আগে সব সময় সে আমাকে হোয়াটস অ্যাপে টেক্সট দিয়ে রাখতো, আমিও চেষ্টা করতাম তার সাথে দেখা করার জন্য। আমাকে দেখার সাথে সাথে সে আমাকে জড়িয়ে ধরতো এবং আমার দুই গালে চুমু দিত।
কুতাহইয়াতে ওল্ড স্কুল নামক একটি বিখ্যাত কফি শপ ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আমরা সেখানে এক সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতাম। আমাকে সে নিজ উদ্যোগে তুর্কি ভাষা শেখাতো। মাঝে-মধ্যে পরীক্ষাও নিতো। ইয়াসমিনের আন্তরিকতা আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে কিছুটা তার্কিশ শিখেও ফেলেছিলাম। দিন যতো গড়াতে থাকে ধীরে ধীরে তার প্রতি আমার আকর্ষণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মেন্টর হিসেবে সে ছিল একশ-তে একশ।
জরুরী প্রয়োজনে একবার হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। আমি অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। প্রবাসের একাকি জীবনে অসুস্থতার দিনগুলোতে পাশে থাকার মানুষ খুঁজে বের করা অনেক বড় সৌভাগ্যের একটি বিষয়। ইয়াসমিনকে বিষয়টা জানানোর পর সাথে সাথে সে মারকাজে এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথে সে আমাকে বারবার অভয় দিচ্ছিল।
তুরস্কের হেলথ কেয়ার সিস্টেম ইউরোপের অনেক দেশ থেকে উন্নত। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করার পর রিসিপশন থেকে আমার থেকে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কপি চাওয়া হলো। ফাইল থেকে ইয়াসমিনকে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কপি বের করলাম। ইয়াসমিন সাথে সাথে আমার হাত থেকে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কপি নিয়ে রিসিপশনে জমা দিল এবং কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমার জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থা করল।
চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশের পর ইয়াসমিনই তাকে সবকিছু বিস্তারিতভাবে বললো। চিকিৎসক আমার ব্লাড প্রেসার মাপলেন। ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতা আছে কি না সে বিষয়েও জানতে চাইলেন। এরপর আমাকে কয়েকটি ওষুধ কেনার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, আমার সমস্যা সে অর্থে গুরুতর নয়। চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
ইয়াসমিন এক ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ওষুধ কিনে আনলো। সব মিলিয়ে ওষুধের বিল এসেছিল- ছয় লিরা। ইয়াসমিন নিজের থেকে সে বিল পরিশোধ করলো। কিছুতেই নিল না।
টানা তিন রাত ভালো মতো ঘুমাতে পারিনি, তাই ঘুমের ওষুধ কিনতে চেয়েছিলাম। ইয়াসমিনকে জিজ্ঞেস করলাম, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ নেওয়া যাবে কিনা।
আমার কথা শোনা মাত্র ইয়াসমিন আমার হাতধরে টানতে টানতে মারকাজের দিকে নিয়ে গেল। আমাকে সে বললো, মানুষের জীবনে হতাশা থাকতে পারে কিন্তু এভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কোনো মানে হতে পারে না।
তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে ঘুমের ওষুধ আমার সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন। কিন্তু সে আমার কোনো কথা শুনলো না। সেদিনের এ ঘটনার পর ইয়াসমিনের প্রতি আমার ভালোলাগা আরও এক ধাপ বেড়ে গেল। মায়ের মুখে একটা কথা বারবার শুনেছি, "জীবনসঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব দুইটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, খুব সহজে যেন তার ওপর নির্ভর করা যায় এবং দ্বিতীয়ত আমরা যাতে একে অন্য প্রতি দায়িত্বশীল হতে পারি।”
ইয়াসমিন মাঝে দুটোই উপস্থিত ছিল। পুরো এক সেমিস্টার জুড়ে সে আমাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে এবং সব সময় সে আমার প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
ইয়াসমিনের সাথে আমার ভ্রমণের স্মৃতিও করেছে। ইরাসমাস স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক কর্তৃক আয়োজিত এক ট্যুরের সুবাদে তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট কাপাডোকিয়া ভ্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। ইয়াসমিন সে ট্যুরেও আমাকে সঙ্গ দিয়েছে, আমার কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে সে বিভিন্ন কিছুর ছবি তুলতো। ইয়াসমিনের ফটোগ্রাফি স্কিল সত্যি ভালো।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ছিল ইয়াসমিনের ২৩ তম জন্মদিন। ফেইসবুকের কল্যাণে আগেভাগে এ বিষয়টি জানতে পারি। তাকে সারপ্রাইজ দিতে উপহার কিনে তার সাথে দেখা করতে গেলাম।
উপহারের বাক্স হাতে পেয়েই ইয়াসমিনের মুখ হাসিতে ভরে উঠলো। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জড়িয়ে ধরলো এবং আমার দু গালে আগের মতোই চুমু দিল।
এক বন্ধুর মাধ্যমে আগে থেকে পেস্ট্রিশপের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে রাখি, কেক ও অন্যান্য ডেকোরেশনের খরচ বাবদ তাকে কিছু লিরা অগ্রিম দিয়েছিলাম। বাজার থেকে ফুলের তোড়া ও গিফট কিনে তার হাতে দিই। আমার ওই বন্ধুর মাধ্যমে তাকে অনুরোধ করি কিছু একটা করার জন্য যাতে কিছুক্ষণ পর যখন আমি ইয়াসমিনকে নিয়ে তার পেস্ট্রিশপে আসবো তখন যাতে তাকে চমকে দেওয়া যায় । পরিকল্পনা মতো সব ঠিকঠাক এগোচ্ছিল।
ইয়াসমিনকে নিয়ে পেস্ট্রিশপের ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে সে ভেতরের ডেকোরেশন দেখে চমকে যায়। পেস্ট্রিশপের ভেতরে বসে একসাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করি, সামনে আরও কী হতে চলেছে সে বিষয়ে ইয়াসমিনের ন্যূনতম ধারণা ছিল না। কয়েক মিনিট পর আমাদের দুইজনকে হতবাক করে পেস্ট্রিশপের ম্যানেজার অর্ডার করা কেক, ফুলের তোড়া ও গিফট নিয়ে হাজির হলো। দোকানে কাজ করা কয়েকজন স্টাফসহ তিনি ইয়াসমিনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ইয়াসমিনকে দেখামাত্র তিনি বললেন, তার গ্র্যাজুয়েশন সাফল্যে আমার পক্ষ থেকে এ আয়োজন। গিফটের সাথে একটা টেডি বিয়ারও তাকে উপহার দিয়েছিলাম, টেডি বিয়ারটা দেখে সে ভীষণ খুশি হলো। বারবার সে টেডি বিয়ারের সাথে সে ছবি তুলতে চাইলো, আমিও তাকে কয়েকটি ছবি তুলে দিলাম।
ইয়াসমিনকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না, তাই আমাকে লেখনীর সহায়তা নিতে হল। আগের থেকে একটা ডায়েরি কিনে বুরসা প্রবাসী এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় তুর্কি ভাষায় আমার মনের ভাব সেখানে লিখে রাখি। সেদিন সব কিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হল। আমার মায়ের সাথেও সে কথা বলতে চাইলো, আমি মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ভিডিও কলে আমার মায়ের সাথে ইয়াসমিনকে সংযুক্ত করে দিলাম। তাকে দেখে আমার মা-ও ভীষণ খুশি হন। তবে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে ইয়াসমিন সেদিন আমার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
এরপর কয়েকদিন ইয়াসমিনের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। রোজা ও অ্যাসাইনমেন্টের চাপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে কয়েকদিনের জন্য দূরে রেখেছিলাম। মাঝখানে একটা কোর্স নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম, তখন ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করি এবং ইয়াসমিন সংশ্লিষ্ট প্রফেসরের সাথে কথা বলে আমার ঝামেলা সমাধানের চেষ্টা করে।
ইয়াসমিনের সাথে এখনও হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ হয়। বর্তমানে সে ইস্তাম্বুল থেকে ৩৪ মাইল দূরের শহর গেবজেতে কাজ করছে। তুরস্কের অর্থনীতি এ মুহূর্তে টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন ডলার কিংবা ইউরোর বিপরীতে তুর্কি লিরার দরপতন তার মতো অনেক সাধারণ মানুষকে হতাশার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
তুরস্ক থেকে আমি সব পেয়েছি, সেবারের সেমিস্টার শেষে আমার সব সাবজেক্টে পূর্ণাঙ্গ গ্রেড এসেছিল। ফ্যাকাল্টির সবাই আমার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন।
তুরস্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় যে কোনো মানুষের চিত্ত হরণ করতে বাধ্য। তুর্কিরাও জাতি হিসেবে অত্যন্ত বন্ধুবাৎসল ও অতিথিপরায়ণ। আরও একটা জিনিস যেটা আমি তুরস্কে বারবার লক্ষ্য করেছি সেটা হচ্ছে কালচারাল ডাইভার্সিটি। অটোমানদের হেঁশেলকে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী হেঁশেলগুলোর তালিকায় একেবারে প্রথম দিকে রাখা হয়। সব মিলিয়ে তুরস্ক আমার মনে এক অপার্থিব অনুভূতির সৃষ্টি করেছে এবং এ দেশটিতে তাই আমি বারবার ফিরে যেতে চাই।
তবে ইয়াসমিনের সঙ্গে কোনও পরিণতির আফসোস আমার সব প্রাপ্তির খাতাকে শূন্য করে দিয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্ব থমকে আছে। একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হলে, হয়তো ইয়াসমিনের সামনে আমার দাঁড়াবো।
লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স,
ইউনিভার্সিটি অব নোভা গরিছা, স্লোভেনিয়া।
লেখকের ইমেইল: rakib.rafi786@gmail.com
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |