আমিরাত সরকার দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ৭৪ শতাংশ লোককে এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় এনেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়তে থাকা দেশগুলো থেকে বিমানে যাওয়া সাধারণ যাত্রীদের আমিরাতে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার।
আবুধাবিতে বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সি ডেজার্ট কিং ট্রাভেলস এর ব্যবস্থাপক মঈন উদ্দীন বলেন, “অন্যান্য সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পরিবারের সঙ্গে কোরবানি ঈদ উদযাপন করতে দুই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফেরেন। কিন্তু এ বছর মাত্র ৫০ হাজার বাংলাদেশি জুন-জুলাই মাসজুড়ে দেশে ফিরেছেন। যারা দেশে ফিরেছেন তাদের আসা এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অন্যান্যদের তুলনায় বেশি ভাড়া রাখছে বলেও জানান মঈন উদ্দীন।
তিনি বলেন, “এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ যখন বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশে ফেরার টিকেটের দাম অন্যান্য এয়ারলাইন্সের চেয়ে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান আরও বেশি নিচ্ছে। ফলে অনেক প্রবাসী দেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও টিকেটের চড়ামূল্যের কারণে যেতে পারছেন না।”
করোনার মধ্যে আমিরাতে আটকে পড়া দুর্দশাগ্রস্ত প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশ বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্লাইট পরিচালনা করে স্বল্প ভাড়ায় কিংবা নিখরচায় যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিমানের বাংলাদেশ বিমানের এ ভূমিকায় রয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ।
ফিলিপাইনস সরকারী তহবিলে দুবাই ও আবুধাবিতে ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ নাগরিক, অসুস্থ নারী, শিশুসহ পরিবারগুলোকে চলতি মাসে চারটি বিশেষ ফ্লাইটে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি জরুরী প্রত্যাবসনে ইচ্ছুক নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিশেষ ওয়েবসাইট খুলেছে। ভার এবং পাকিস্তানও স্বল্প ভাড়ায় তাদের বিপদগ্রস্ত আমিরাত থেকে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে দেশে গিয়েও বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই। আমিরাত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে বা ফুরাতে যাচ্ছে। ফলে দেশে অবস্থানরত আমিরাত প্রবাসীরাও উৎকণ্ঠায় এবার কোরবানির ঈদ পালন করছেন।
“সমস্যা হলো এ বিষয়গুলো নিরসনে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করা অথবা আলাপ আলোচনা করার জন্য প্রবাসীদের কোনও প্রতিনিধি নেই। যার ফলে আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে প্রবাসীরা বিচ্ছিন্নভাবে ফ্লাইট, টিকেট, ভিসার মেয়াদ কিংবা টিকার জন্য এখানে-সেখানে বিক্ষোভ করেছেন, মিছিল করছেন। সর্বশেষ দেখলাম টিকার নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের কি নিদারুণ উৎকণ্ঠা, প্রাণান্তকর সংগ্রাম!"
বাংলাদেশে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য আমিরাতে আসার ফ্লাইট চালু হওয়া প্রসঙ্গে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ডিপ্লোম্যাট, সরকারি ডেলিগেশন, ইউএই-র গোল্ডেন ভিসাধারীদের দেশ থেকে আসতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সাধারণ যাত্রীদের চলাচলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আছে।”
“করোনা ইস্যু নিয়ে প্রতিটি দেশ তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এটাই স্বাভাবিক। এতে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এয়ারলাইনসগুলো সাফার করছে। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি একটা 'সার্টেইন লেভেল' এ উন্নীত হলে সবকিছু সহজ করা হবে। তবে করোনার সেকেন্ড ওয়েভের পিক লেভেলে আমরা এখন আছি, তা ড্রপ না করা পর্যন্ত তারা তা অবজার্ভ করবে। আমরাও এখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগে আছি।”
মেয়াদোত্তীর্ণ বা মেয়াদ শেষের দিকে রয়েছে এমন সংকটে পড়া আমিরাতে কর্মরত প্রবাসীদের ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রচলিত আইন অনুযায়ী রেসিডেন্স ভিসাধারীরা ৬ মাসের বেশি দেশের বাইরে অবস্থান করলে তাদের ভিসার বৈধতা থাকে না। যাদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে তাদেরকে তাদের স্পন্সরের সাথে যোগাযোগ করে নতুন ভিসা ও আইসিএ-র অনুমোদন নিতে হবে। তবে আমিরাতের কর্তৃপক্ষ কিছুদিন পরপর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। আমরাও বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করি শিগগিরই অবস্থার উন্নতি ঘটবে।"
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |