আমিরাতে ঘরে ঘরে করোনাভাইরাস টেস্ট, স্বস্তিতে প্রবাসীরা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আমিরাতে নানা ধরনের পদক্ষেপে সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2020, 04:11 PM
Updated : 4 August 2020, 04:11 PM

আবুধাবি পুলিশ মেডিকেল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে রাজধানী শহরে বাড়ি বাড়ি কোভিড টেস্ট পরিচালনা করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সন্ধ্যায় ঈদের ছুটির শেষ দিনে আবুধাবি খলিফা স্ট্রিট এলাকায় ২৬টি বহুতল ভবনে অভিবাসীদের মধ্যে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়।

পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে প্রতিটি ফ্ল্যাটে নক করে অভিবাসীদের আইডি সংগ্রহ করেন এবং পরে সবার কাছ থেকে কোভিড টেস্টের নমুনা নেওয়া হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলে। পরে এতে অংশগ্রহণকারী সবার জন্য রাতের খাবার সরবরাহ করা হয়।

এরইমধ্যে আবুধাবির শিল্পনগরী মুসাফফায় বসবাসরত পাঁচ লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীর মধ্যে ছয় সপ্তাহের করোনাভাইরাস পরীক্ষার কর্মসূচি শেষ হয়।

শহরের আবাসিক ভবনগুলো,ভবন সংলগ্ন দোকানপাটের কর্মীদেরও এর আওতায় আনা হয়। এ কর্মসূচির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং শ্রমিক আবাসনগুলো।

পরবর্তীতে অন্যান্য আবাসিক এলাকায় তা পরিচালনা করা হয়। রাজধানী আবুধাবি শহরের আনাচেকানাচে ব্যাপকহারে পরিচালিত এ বিনামূল্যের টেস্টে জাতীয় নাগরিক ও অভিবাসীদের সবার জন্য সেবা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর প্রবাসী ব্যবসায়ী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন চৌধুরী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমিরাত সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এদেশে সরকার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার সেরা এমনকি ইউরোপ-আমেরিকায় পর্যন্ত আমিরাতের মতো স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার দৃষ্টান্ত নাই।”

তিনি সরকারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে করোনাভাইরাস টেস্টের  কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, “এতে অংশ নিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”

গাজীপুরের কাপাসিয়ার সেলিম মিয়া ২২ বছর সৌদি আরব থাকার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে নতুন কর্মজীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস  টেস্ট করানোর জন্য ৩৫০ দিরহাম লাগতো। কোন কাজও নাই কী করে এত টাকা দেব ভাবছিলাম। ঘরে এসে ফ্রি করোনা টেস্ট করছে আমিরাত সরকার। এজন্য তাদের দোয়া করি। এই ধরনের সেবা সৌদি আরবে কখনো দেখি নাই।”

ভারতের ব্যাঙ্গালোরের মধুরা প্রবাসী চন্দ্রপাড়া পেশায় একজন প্রকৌশলী থাকেন আবুধাবিতে।

তিনি বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান এখনো করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না কারণ একদিকে যেমন আমাদের জনগণ অসচেতন, অন্যদিকে আমাদের দেশগুলোয় প্রশাসনযন্ত্র এমনভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে পড়ে।”

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এরই মধ্যে ৫০ লাখ মানুষের কোভিড-১৯ টেস্ট সম্পন্ন করেছে।

দেশটির মোট জনসংখ্যা অভিবাসী জনগোষ্ঠী সহ প্রায় ৯৫ লাখ। দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে  আরোগ্য লাভের হার ৯০ শতাংশ। পরপর গত ৩ দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরব আমিরাতে কোনও মৃত্যু ঘটেনি।

মহামারীর এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদতম ৩০টি দেশের মধ্যে আমিরাত ১০ম স্থানে রয়েছে বলে জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। এ অর্জনকে ধরে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই এ সংক্রান্ত নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারি করেছে। আবুধাবি অন্যান্য আমিরাতের সাথে জনচলাচল বন্ধ রেখেছে। মসজিদসহ নানা উপাসনালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!