ব্রিটেনে তহবিল সংগ্রহে সাড়া ফেললেন শতবর্ষী দবিরুল

করোনাভাইরাস সংকটে দুর্গতদের জন্য তহবিল সংগ্রহে নেমে সাড়া ফেলেছেন শতবর্ষী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।

সৈয়দ নাহাস পাশাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2020, 02:57 PM
Updated : 6 May 2020, 03:05 PM

তহবিলের জন্য লন্ডনের উপকণ্ঠে সেন্ট আলবান্স শহরে নিজের বাড়ির বাগানে প্রতিদিন ৮০ মিটার পথ হাঁটছেন তিনি ১০০ বার করে। ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে তার এই কার্যক্রম, পুরো রোজার মাসে তিনি এই হাঁটা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

মাত্র ১০ দিনে দবিরুলের তহিবলে জমা হয়েছে ৭৮ হাজার পাউন্ডের বেশি অর্থ, যদিও মাত্র এক হাজার পাউন্ড সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন তিনি। প্রতি মুহূর্তে তার এই তহবিলে অর্থ জমা পড়ছে।

১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের দিরাই থানার কুলঞ্জ গ্রামে জন্ম নেওয়া দবিরুল ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার পর সেখানে চাকরির পাশাপাশি কমিউনিটির কাজেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার স্ত্রী খালেদা দবীর চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেত্রী। আর কমিউনিটিতে সুপরিচিত পেনশনার দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে অনেকেই চেনেন কবি দবিরুল হিসাবে।

কবিতাপ্রেমী দবিরুল ইসলাম চৌধুরী এখনো কোনো সভা-সমাবেশে গেলে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনান। শত শত কবিতা লিখেছেন তিনি। তার লেখা কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংকটে পুরো বিশ্ব যখন টালমাটাল, সেই সংকটে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা ভর করে শতবর্ষী দবিরুলের মাথায়। এর মধ্যে টেলিভিশনে আরেক শতবর্ষী ব্রিটিশ সেনা টম মুরের নিজের বাড়ির আঙিনায় হেঁটে এনএইচএস অর্থাৎ ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য ৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহের খবর দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যোদ্ধা টম মুর নিজের শততম জন্মদিনে বাড়ির সামনে ১০০ চক্কর হেঁটে তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। ব্রাউফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন মুরের এই আহ্বান সাড়া দিয়ে তহবিলে অর্থ দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ।

তার এই তৎপরতায় অনুপ্রাণিত হন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, তিনিও দুর্গত মানুষের কল্যাণে ১০০ বছর বয়সে হেঁটে তহবিল সংগ্রহের চ্যালেঞ্জে নেমে পড়েন। তার তহবিলে প্রথম একজন দান করেন ১০০ পাউন্ড।

দৃঢ়চেতা এই প্রবীণের উদ্যম দেখে তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন ছেলে ব্যবসায়ী আতিক চৌধুরী ৷ এরপর দবিরুলের প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এস টিভির প্রতিষ্ঠাতা মাহি ফেরদৌস জলিলও। বিবিসি টেলিভিশন ও গার্ডিয়ানসহ যুক্তরাজ্যের মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে।

কয়েক বছর আগে স্ত্রী খালেদা দবির চৌধুরীর সঙ্গে দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।

মাত্র একশ পাউন্ড দিয়ে যাত্রা শুরু করা দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই তহবিল ১০ দিনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার পাউন্ডে। তহবিল শেষ পর্যন্ত লাখ পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তার ছেলে আতিক চৌধুরী ।

সংগৃহীত সব অর্থ দান করা হবে রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্ট (আরএফসি) নামের একটি চ্যারিটিকে। এই চ্যারিটি ২৬টি সংগঠনকে এই অর্থ সমানভাবে ভাগ করে দেবে, যা দিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে দুর্গতদের সহায়তা করা হবে।

দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে তিনি অভিভূত। তার উৎসাহও আরও বেড়ে গেছে। তিনি রমজানের শেষ পর্যন্ত  হাঁটা অব্যাহত রাখবেন।

“মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং এই দুঃসময়ে আমি একটা কিছু করতে পারছি যতই তা ভাবছি ততই আমার শক্তি বেড়ে যাচ্ছে।”

হাজার হাজার মানুষ যারা অর্থ দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দবিরুল ইসলাম চৌধুরী।

চ্যানেল এস টিভিকেও ধন্যবাদ দেন তার এই উদ্যোগের প্রচারে সহযোগিতার জন্য। চ্যানেল এস টেলিভিশনও আরএফসির জন্য রোজার মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে।

রমজানে ২৬টি লাইভ আপিলের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলটি ২৬টি চ্যারিটি সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। আরএফসির জন্য সংগৃহীত সব অর্থও এই ২৬টি সংগঠনকে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়, যারা মানুষের কল্যাণে কাজ করে ।

বাবা হাঁটা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে দবিরুলের ছেলে আতিক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাবার জন্য আমি গর্বিত। তিনি দৃঢ়চেতা সহজ সরল কবি মানুষ। এই লকডাউনে পরিবারের জন্য একটি কঠিন সময় যাচ্ছে। তিনি আত্মীয়-স্বজন অনেককেই দেখতে পারছেন না। এরমধ্যেই দুর্গত মানুষকে সাহায্যের জন্য নেমে পড়েছেন।”

তার শরীরের দিকে সব সময় নজরে রাখছেন বলে জানান তিনি।

https://www.justgiving.com/fundraising/dabirul-islam-choudhury এই ওয়েবসাইটে গিয়ে দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর এই উদ্যোগে যে কেউ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!