দূতাবাসের তথ্যমতে, এদের মধ্যে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন, বাকিরা হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারি খরচ ও বিমানের ফ্রি টিকেটে ৮৪০ প্রবাসীর লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়, ৩৫ প্রবাসীর লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয় এবং বাকি লাশগুলো মৃতব্যক্তির স্পন্সর ও আত্মীয়-স্বজনদের উদ্যোগে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
কুয়েতে গত ১৫ বছরে মৃত্যুর মোট সংখ্যার অনুপাতে গড়ে প্রতি বছর ১৯৫ জন ও প্রতি মাসে ১৬ জন প্রবাসী মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী প্রাণ হারান ২০১৯ সালে। এ বছরটিতে ২৫৬ প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ২৫, আত্মহত্যায় ৩ ও আরও নানা কারণে ২২৬ জন প্রবাসী মারা গেছেন। অর্থাৎ গত বছর গড়ে প্রতি মাসে মারা গেছেন ২১ জন প্রবাসী।
কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৪ শতাংশ প্রবাসীদের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এদের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ৩০ শতাংশ, বাকিরা হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন।
অন্যদিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব মধ্যবয়সী কর্মীদের লাশ বাংলাদেশে গিয়েছে তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু স্ট্রোকের কারণে। এছাড়া গত চার বছরে যত প্রবাসীর লাশ দেশে গিয়েছে, তাদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয়েছে আকস্মিক। আর এসব প্রবাসীদের বয়স ২৮ থেকে ৪০ এর মধ্যেই ছিল।
‘বাংলা টিভিতে’ প্রচারিত ‘প্রবাসীর ডাক্তার’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, লেখক ও চিকিৎসক ফারহানা মোবিন প্রবাসীদের নানা রোগের চিকিৎসা বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তার মতে প্রবাসীদের রোগাক্রান্ত হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
ফারহানা মোবিন বলেন, “সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে, নিজে আরো সচেতন হতে হবে। তবেই সুস্থ থাকা সম্ভব এবং এতে করে প্রবাসী মৃত্যুর সংখ্যাও কমে আসবে।”
কুয়েতের আব্বাসিয়া এলাকায় অবস্থিত রয়াল সিটি ক্লিনিকে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক নাজমা তালুকদারের মতে কুয়েতে ৩৫ থেকে ৪০ এর মাঝামাঝি বয়সে হৃদরোগ বা স্ট্রোকে প্রবাসীদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হচ্ছে।
নানা কারণে কুয়েতে প্রতি বছর বহু প্রবাসী প্রাণ হারাচ্ছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি রোগ। এসব রোগের কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব উল্লেখ করে নাজমা তালুকদার প্রবাসীদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের পাশাপাশি শরীরচর্চারও পরামর্শ দেন।
কুয়েত প্রবাসীদের লাশ দ্রুত বাংলাদেশে পাঠাতে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ পালন করছে উল্লেখ করে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বলেন, “বছর তিনেক আগে কুয়েতে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যুর হয়, সেসব প্রবাসীদের লাশ দুদিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল।”
বাংলাদেশে লাশ পাঠানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার উপর নির্ভর করে দূতাবাসের কার্যক্রম। এসব কাজে দূতাবাস বরাবরই আন্তরিক বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
প্রবাসীদের ‘অসচেতনতা’ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মূল কারণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “সময় ও পরিস্থিতি অনেক সময়ই নিজেদের অনুকূলের বাইরে চলে যায়, এটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য যতটুকু সম্ভব চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।”
কুয়েত প্রবাসীরা জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মূল কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশ দূতাবাস অথবা বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে প্রতি মাসে কিংবা দুই মাস পর পর একটি সেমিনার করা যেতে পারে।”
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |