যুক্তরাষ্ট্রের অরলান্ডো স্যানফোর্ডে জমকালো পিঠা মেলা

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার স্যানফোর্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে পিঠা উৎসব।

টিটো বেপারী, ফ্লোরিডা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2020, 02:53 PM
Updated : 19 Jan 2020, 02:54 PM

স্যানফোর্ড বাৎসরিক পিঠা উৎসব কমিটির উদ্যোগে স্থানীয় সময় শনিবার এক বর্ণাঢ্য পিঠা মেলাটি বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়।

অতীতের সব পিঠা মেলার রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এবার মোট ১৪১টি বিভিন্ন ধরনের পিঠা মেলায় উপস্থাপন করা হয়।

হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১০ জনকে শ্রেষ্ঠ পিঠা প্রস্তুতকারক হিসেবে বিজয়ী করা হয়। তাদেরকে পুরস্কৃতও করা হয়।

দশটি পুরস্কারের মধ্যে ছিল দুইটি সোনার চেইন, দুটি এমকে ব্র্যান্ডের ব্যাগ এবং সাতটি জামদানি শাড়ি।

র‍্যাফেল ড্র এর পুরস্কারের মধ্যে ছিল অরলান্ডো টু ঢাকা রাউন্ড ট্রিপ টিকেট, আপেল ওয়াচ, আইপ্যাড এবং প্রত্যেকটি পিঠা প্রস্তুতকারককে একটি করে শাড়ি উপহার দেওয়া হয়।

প্রতিটি পিঠা গ্রহণ এবং বিচার করার জন্য কমিটি করা হয় । পিঠা গ্রহণ করেন- বুলবুল আহমেদ, সাইদ হোসেন (মিলন), জাহাঙ্গীর আলম,আলি আজগর, টুলু ভুইয়া এবং তাদের সহযোগিতা করেন টিটু বেপারী।

পিঠার বিচারক ছিলেন- সামসুর রহমান (সামু), আবেদ আমির, চিকিৎসক রিপন, নাজমা বুলবুল, লিপি বেগম এবং সুলতানা আলম।

পিঠা উৎসবের অন্যতম সংগঠক সাইফুল ভুইয়া (দুলুর) তত্ত্বাবধানে এবং টনি হোসেনের সাবলীল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সানু, ফিরোজ আহমেদ, নান্টু চৌধুরি, রিপন , বাসার ভুইয়া, জাহাঙ্গীর আলম, আলি আজগর, সাদাত মিসু, বিদ্যুত হোসেন, সদরুল আলম, নুরুল ইসলাম  টিপু, জহিরুল হক রয়েল, তাহের, তারেক খান, তারিকুল ইসলাম রফিকুল আবেদিন, টিটু বেপারী, আলম, তহিদুল আলম সবনম ভুইয়া, সোহেলী চৌধুরি, শাহানাজ রুনা, ঝর্ণা হোসেন, সুলতানা রুমি, লিপি প্রমুখ। এদের রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে পিঠা মেলাটি সফল হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পল্লি ইসলাম, বাচ্চু ভুইয়া, বাদল ভুইয়া এবং সাহিনা গাফ্ফার সেতু । অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের নৃত্য পরিবেশন ছিল চোখে পড়ার মতো যার মূল পরিকল্পনা করেন সাহিনা গাফ্ফার সেতু।

এবারের পিঠা মেলায় দর্শকদের একটু ভিন্ন রকম আনন্দ দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয় ধাঁধা প্রতিযোগিতা। এই ধাঁধা প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা করেন টিটু বেপারি। এর পুরস্কারও তার সৌজন্যেই দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতা পরিচালনা করেন টনি হোসেন। রান্নার পুরো দায়িত্বে ছিলেন মাস্টার শেফ খ্যাত তাহের , যার অক্লান্ত পরিশ্রমে বরাবরই খাবার মুখরোচক হয়ে উঠে। উৎসবে তার পরিশ্রম লিখে শেষ করা যাবেনা। খাবারের আয়োজনে ছিলেন নুরুল ইসলাম টিপু।

পিঠা মেলার অতিথিরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে এরকম সুন্দর অনুষ্ঠান ভবিষ্যতেও করার জন্য অনুরোধ করেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানে প্রথমে একটু সমস্যা হলেও দুপুর ১টা থেকে অংশগ্রহণকারীরা পিঠা নিয়ে আসা শুরু করেন। বেলা আড়াইটা থেকে পিঠা মেলায় মানুষের ঢল নামে। পিঠা মেলার এক যুগ উপলক্ষে সব নারীদের শাড়ি আগেই তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সেই শাড়ি পড়ে তারা যখন পিঠার ডালা সাজিয়ে হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তখন অনুষ্ঠানস্থল স্যানফোর্ড ডার্বি পার্ক হয়ে উঠেছিল গ্রাম-বাংলার মুখ।  

আমন্ত্রিত অতিথিদের মুখে ছিল যেন এক আনন্দের উচ্ছ্বাস। অতিথিদের কথোপকথনে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে শোনা যায়- প্রবাসে এতো বাহারি সাজে, এতো বাহারি পিঠার সমাগম কখনো দেখিনি! অনুষ্ঠানটি ক্যামেরাবন্দি করেন সাদাত মিসু ।

বিভিন্ন পিঠার পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় বরাদ্দকৃত জায়গার চেয়ে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে উৎসবের আয়োজন করতে হয়। 

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি সামদুস তোহা বলেন, “আমার জীবনের দেখা পিঠা মেলার মধ্যে এটা ছিল অন্যতম। এতো পিঠার সমাগম কখনো আমার চোখে পড়েনি।”

কমিউনিটির পরিচিত মুখ ইলিয়াস ঠাকুর বলেন, “আমি সত্যিই অভিভূত এতো সুন্দর আয়োজন এতো পিঠার সমারোহ, বৈরি আবহাওয়ার পরেও এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে। পিঠা মেলার আয়োজকদের সবার মুখে একটাই কথা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য এই প্রবাসের মাটিতে সবাইকে আনন্দ দেওয়া।”

পিঠা কমিটির অন্যতম সংগঠক দুলু ভুইয়া, টনি হোসেন, নান্টু চৌধুরি এবং ফিরোজ হোসেন বলেন, তারা এই অনুষ্ঠান তাদের সাধ্যমত সুন্দর করার চেষ্টা করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো সুন্দর করবেন ।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে এক যুগ উপলক্ষে কেক কাটা হয় এবং একই দিনে দুলু এবং শবনম ভুইয়া জুটির বিবাহ্বার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়। উপস্থিত সবাই তাদের করতালির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি। ব্যবসায়ী ও সংগঠক।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!