প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এ প্রাকৃতিক জলাশয়ের নাম হলো ‘রুদ্রসাগর’। এ জলাশয়ের বুকেই ভেসে আছে অসাধারণ এ র্কীতি। রাজা-বাদশাদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কাটানোর জন্যই জলমহলটি তৈরি করা হয়েছিল।
নীরমহল ভারতের দ্বিতীয় এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র জলমহল। এটি অবস্থিত ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহিজলা জেলার মেলাঘর গ্রামে, একসময় সেখানে রাজা-বাদশাদের আনাগোনা ছিল। সেখানে থাকা জলাশয় ‘রুদ্রসাগর’ ঘিরেই রাজাদের আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। আর তাইতো সেখানে তারা নির্মাণ করেন এই শখের জলমহল। ভারতেরই আরেক প্রদেশ রাজস্থানের উদয়পুরে ঠিক একই রকম একটি প্রাসাদ রয়েছে।
এ ভবনটি একাধারে যেমন রাজার সৌন্দর্যপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়, তেমনি হিন্দু ও মোঘল সংস্কৃতি মিশিয়ে তিনি একটি দর্শনীয় কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেই ধারণারও প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে মহারাজা অনেক অর্থ খরচ করে এই প্রাসাদ নির্মাণ করলেও খুব বেশি দিন তিনি ভোগ করতে পারেননি। মাত্র সাত বছর তিনি এই প্রাসাদ ব্যবহার করেছেন। কারণ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মহারাজা মারা যাওয়ার পর বহুদিন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এ সময় আস্তে আস্তে এটি ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে।
এই মহলটিতে আছে ২৪টি কক্ষ। এর মধ্যে আছে রাজদরবার, নাচমহল, অন্দরমহল, অতিথিশালা, রাজা-রানীর থাকার জায়গা, ওয়াচ টাওয়ার, সেনা ব্যারাক, জেনারেটর ঘর, রান্নাঘর, ফুলের বাগান ও শৌচালয়। মহলের রাজপরিবার ১৯৬৮ সালে ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব দপ্তরের অধীনে এটি দিয়ে দেন এবং রাজস্ব দপ্তর ১৯৭৮ সাল থেকে তথ্য সংস্কৃতি এবং পর্যটন দপ্তর দিয়ে পরিচালিত করছে। পর্যটকদের থাকার জন্য ত্রিপুরা পর্যটন উন্নয়ন নিগম রুদিজলার পাশেই নির্মাণ করেছেন পর্যটক আবাস ‘সাগরমহল’।
ত্রিপুরার রাজাবাহাদুর এবং রাণী দুজনেই ছিলেন খুব রবীন্দ্র অনুরাগী। গান, বাজনা নাটক চলতেই থাকত। তাই সেখানে নির্মিত হয়েছিল একটি নাট্যমঞ্চ। সেখানে রান্নাঘর-রন্ধনশালা এবং ভোজনকক্ষ ছিল পাশাপাশি। নাচগান দেখার পর রাজার পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবের জন্য থাকত বিশাল খাবার আয়োজন। সেই ভোজনকক্ষে বসেই সবাই খাবার খেতেন। রাজা ঘনিষ্ট পরিজনদের নিয়ে আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত থাকতেন বলেই সেখানে বানিয়েছিল প্রমোদগৃহ। সেখানে অন্যদের প্রবেশ নিষেধ ছিল।
নাচঘরের পাশেই ছিল রাজার শোবার ঘর। রাজা যখন ক্লান্ত হয়ে যেতেন তখন মনোরম সাজে সজ্জিত ওই শয়নকক্ষে গিয়ে বিশ্রাম নিতেন। রাজার ঘনিষ্টদের থাকার জন্য অতিরিক্ত একটি ঘরের ব্যবস্থা ছিল। প্রয়োজনমতো তাদের জন্য পরিপাটি ব্যবস্থা হতো রাজার নির্দেশে। এক্ষেত্রে কোনরকম ক্রুটি তিনি পছন্দ করতেন না। তাই রাজার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হতো।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বাসে সরাসরি মেলাঘর যাওয়া যায়। এছাড়া জিপ ও অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যাওয়া যাবে। সময় লাগে দুই ঘণ্টা। মেলাঘর বাসস্ট্যান্ডে সাগরমহল ট্যুরিস্ট লজে রিকশা দিয়ে যেতে হবে।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |