গত ৪ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের হেকচার স্টেট পার্কের ফিল্ড-২ ইউনিটে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে খাবার-দাবার ছিলো গরুর মাংশের ভুনা, মুরগির রোস্ট, কাবাব, আচার, পোলাও, পরোটা, হালুয়া, তরমুজ, ঝালমুড়ি ও পায়েস। খেলাধুলার আয়োজনে অংশ নেন ছোট্ট শিশু, বোন-ভাই, ভাবি, বউদি ও মা-খালারা। দৌড় প্রতিযোগিতা, বালিশ খেলা ও র্যফেল ড্রতে অংশ নেন তারা।
বোস্টন থেকে অতিথি হিসেবে আমারও সুযোগ হলো সেই বনভোজনে যোগ দেবার। পরিবার নিয়ে বোস্টন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে হাজির হলাম সেখানে একদিন আগেই।
তাছাড়া আমার স্ত্রীকে নিয়ে হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের বাঙালি ‘সাগর’ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। সাগরের সুপ ও চিকেন ললিপপ আমার স্ত্রীর প্রিয়। তাই বোস্টন থেকে নিউ ইয়র্কে সাড়ে তিন ঘণ্টার ২০০ মাইল পথ গাড়ি চালিয়ে এলাম।
ছোট ভাই বিদ্যুৎ, সে থাকে তার পরিবার নিয়ে নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা শহরে, হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের কাছে। রীতি আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। নিউ ইয়র্কে গেলে তার যে যত্ন ও আয়োজন সব সময়ই মন গলে দেবার মতো। আমার কিউট ভাতিজা শায়ান। তার আধা বাংলা ইংলিশ শুনতে আমার দারুণ লাগে। আমাকে দেখলেই সে ঘাড়ে লাফ দিয়ে উঠে। ওর মৃদু বাংলা শুনলে আর খেলার সঙ্গী হতে পারলে মনটা এমনিতেই হালকা হয়ে যায়।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আমরা সবাই যেন সমাগত হয়েছি গোবিন্দগঞ্জের সেই আগের কুঠিবাড়ীতে। ঝিলের পাড়ে অথবা গোবিন্দগঞ্জ কলেজ পথে। দেশে থাকতে যে স্থানগুলোতে অতীতে নানা উপলক্ষে আমরা বন্ধুরা একত্রিত হতাম। পুরানো স্মৃতি যেন মুহূর্তের মাঝে আলোড়িত হলো।
গ্রীষ্ম এলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিনমাস স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। এসময় ছেলেমেয়েরা বই-খাতা ফেলে রেখে মাথার নিউরন সেলগুলোকে উন্মুক্ত করে ফেলে। তারা চায় খেলাধুলা, আনন্দ, ডিজনি, সুইমিং, বিচের বালি ও পানিতে শরীর ভেজাতে। ছেলেমেয়েদের এ আনন্দগুলোকে উপভোগ্য করে তুলতে পিতা-মাতারাই হয়ে উঠে তাদের প্রিয় বন্ধু ও সঙ্গী। এসব আনন্দের পাশেও অভিভাবকরা চায় কিভাবে আমাদের প্রবাসী ছেলেমেয়েদের দেশীয় ঐতিহ্যে আরো কাছে আনা যায়, কিভাবে একসঙ্গে এক বন্ধনের মাঝে তাদেরকে ডুবিয়ে রাখা যায়।
সেই দুর্বার আকাঙ্খা থেকেই আমরা মনে স্বপ্ন আঁকি যে, তারা ডাক্তার হউক, ইঞ্জিনিয়ার হউক, সায়েন্টিস্ট হউক, পুলিশ অফিসার হউক। সমাজের সব স্তরেই তারা ছড়িয়ে পড়ুক। ব্যস্ত জীবনের এসবের মাঝেও যেন তারা তাদের বিনি সুতার টানকে ভুলে না যায়, বাঙ্গালী সংস্কৃতিটা যেন তাদের মাথা থেকে হারিয়ে না যায়। শুধু সন্তানরাই নয়, আমাদের বড়দের মাঝে থেকেও যেন তা হারিয়ে না যায়।
তাই তো আমরা বাঙ্গালীরা বিদেশে প্রায় সমবেত হই ছোট-খাটো যে কোনো অকেশনে। প্রবাসে বাৎসরিক বনভোজন সেরকমই এক আয়োজন যার মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে অরিজিনকে, সংস্কৃতিকে ফিরে পেতে চেষ্টা করি। বিদেশে থাকলেও সোনার বাংলাকে মগজে ধারণ করি।
নিউইয়র্ক প্রবাসী গোবিন্দগঞ্জবাসিদেরকে তাই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই লং আইল্যান্ডে এমন এক জমকালো বনভোজন আয়োজনের জন্য। বনভোজন শেষে গাড়িসহ ফেরিপথে নিউ ইয়র্কের ওরিয়েন্ট ফেরিঘাট থেকে শিপে কানেক্টিকাট স্টেটের লন্ডন শহর হয়ে বোস্টনে ফেরা গভীর রাতে।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহর থেকে
ইমেল: alamrowshon@gmail.com
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |