পাহাড়ের চূড়ায় মেঘেরা খেলে ডানা মেলে। ক্যামেরোনের পাহাড়গুলো যেনো মেঘেদের বাড়ি। মেঘেরা সেখানে ঘর-সংসার পেতেছে। এজন্য সেখানে সবসময় মেঘ থাকেই। মেঘকন্যারা নিজেদের ঘরসংসার ফেলে যাবেই বা কোথায়! ওরা সেখানেই ওড়ে বেড়ায়। কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। যতই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক সেখানে মেঘ বালিকাদের পুনর্জন্ম হয়ে যায়। সবসময় মেঘ বালিকারা ঘুরে বেড়াবেই।
গুহার উপরের দিকে শাক-সবজি বাগান, আঁকাবাঁকা সড়কের পাশ ঘেষে স্ট্রবেরি বাগান। স্ট্রবেরি বাগানগুলো সবার জন্য উম্মুক্ত। যে কোনো বাগান পরিদর্শন করা যায়। সব বাগানই অত্যন্ত চমৎকারভাবে সাজানো-গোচানো। দেখে মন জুড়িয়ে যায়। সব বাগানের সামনেই বিক্রয় প্রদর্শনী আছে। সেখানে তাজা স্ট্রবেরি ও স্ট্রবেরিতে তৈরি চকোলেটসহ নানা ধরনের খাবার বিক্রয় হয়।
মৌমাছি মিউজিয়াম থেকে সামনে আরেকটু গাড়ি চালালেই দেখা যায় ‘বাটারফ্লাই ফার্ম’। এর আগে আছে গোলাপ বাগান 'রোজভেলি'। পাঁচ রিঙ্গিত প্রবেশ ফি দিয়ে বাগানে ঢুকলেই গোলাপ ও ফুলপ্রিয় যে কোনো মানুষের মন ভরে যাবে ফুলের সৌরভে। সেখানে আছে নানা রঙের নয়নাভিরাম গোলাপ ফুল। কুয়ালালামপুরের চায়নাটাউনে কাঁচা ফুলের দোকানগুলোতে বহু বছর ধরে দেখে আসছি নানা রঙের গোলাপ ফুল। কেউ কেউ বলেন, এগুলো রঙ দিয়ে কালার করা হয়। গোলাপ এতো রঙের হয় না।
রোজভেলিতে ঢুকেই বুঝলাম চায়নাটাউনের সেই গোলাপগুলোর রঙ নকল নয়। আসলেই গোলাপ ফুল বহু রঙের হয়। রোজভেলিতে গোলাপ ছাড়াও আছে বিভিন্ন ফুল, ঝর্ণা, ময়ূরসহ নানা পাখি ও ছবি তোলার মত ভিউ নিয়ে বৈঠকখান।
বাটারফ্লাই ফার্ম ফেলে গেলেই মিলবে ‘পাচার মালাম’, মানে হলো ‘রাতের বাজার’ যেটা বিকেল থেকেই বসে। পাচার মালামে স্ট্রবেরিসহ তাজা শাকসবজি ও স্থানীয় বিভিন্ন ফল বিক্রয় হয়। সেখান থেকে উঁচুনিচু পথ চলতে চলতে গাড়ি পৌঁছে গেলো চা বাগান '’ক্যামেরোন টি ভেলি'। অসাধারণ সুন্দর 'ক্যামেরোন টি ভেলি'। দুই পাশে তার উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় সাদা-কালো মেঘ ওড়ে।
নিচে নামার পথে দেখা মিলে স্থানীয় আদিবাসীদের (ওরাং আসলি)। অর্ধেক নামার পর লাতান ইস্কান্দারে রয়েছে নয়নাভিরাম পাহাড়ি ঝর্ণা। ঝর্ণায় এলাকায় রয়েছে আদিবাসীদের হাতে তৈরি জিনিসের কয়েকটি দোকান। পাশাপাশি খাবারের দোকানও রয়েছে। পুরো ক্যামেরোন হাইল্যান্ডসে বিভিন্ন জায়গায় সড়কের পাশে মার্কেট ও হোটেল। রয়েছে কুয়ালালামপুরের মতই পনের-বিশ তলা অ্যাপার্টমেন্ট।
ক্যামেরোন হাইল্যান্ডস পাহাং প্রদেশের একটি জেলা। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে দুই হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ২৫৯ ফুট উচুঁ ক্যামেরোন হাইল্যান্ডস। এটি মালয়েশিয়ার প্রাচীনতম পর্যটন এলাকাগুলোর একটি। আমাদের পিকনিক বাস কুয়ালালামপুর থেকে সমতলে দুই ঘণ্টা পথচলার পর থেকে পৌঁছে যায় পাহাড়ি পথে; সম্পূর্ণ পাহাড়ি পথ। মাত্র দুই লেনের পাহাড়ি সড়ক।
একলাইন দিয়ে উপরে উঠা, আরেক লাইন দিয়ে নিচে নামার। আমরা অবশ্যই যে পথ দিয়ে ক্যামেরোন হাইল্যান্ডস'র উপরে উঠেছি, সে পথ দিয়ে নিচে আসিনি। আমাদের বাস পর্যটন স্পটগুলোয় থামতে থামতে অন্য পথ দিয়েই নিচে নেমেছে। সর্বশেষ আমরা দেখেছি লাতান ইস্কান্দারে পাহাড়ি ঝর্ণা।
সড়কে সব জায়গায় লেখা আছে কত গতিসীমায় গাড়ি চলাতে হবে। বাসের ড্রাইভার সড়কে লেখা নির্দেশনার বাইরে গাড়ি চালায়নি কোথাও। তাই ক্যামেরোন হাইল্যান্ডসে উপরে উঠতে মোটামুটি সময় খরচ হয় অনেক। উপরে উঠে প্রথমেই দেখা যাবে স্ট্রবেরি বাগান। ক্যামেরোনে আছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। গাড়িত পথ চলতে চলতে বিভিন্ন স্পটে থেমে থেমে পরিদর্শন করেছি স্পটগুলো।
যাওয়া আসা ও ঘোরাঘুরি সব মিলিয়ে আমাদের বরাদ্দ ছিলো একদিন। প্রবাসী তরুণ উদ্যোক্তা শাহাবুদ্দিন আহমেদের 'ট্রাভেল স্টোরিস' এর আয়োজনে ছুটির দিন রোববার সকাল আটটায় পিকনিকের বাস ছেড়েছিলো কুয়ালালামপুরের মসজিদ জামেক ডব্লিউ হোটেলের সামনে থেকে। ক্যামেরোন ঘুরে রাত পৌনে বারোটায় বাস ফিরে এসে মসজিদ জামেক এলআরটি স্টেশনের সামনে থামার মধ্য দিয়ে ষোল ঘণ্টার আনন্দ-ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হয়।
ট্রাভেল স্টোরিসের কথা একটু বলতেই হয়। শাহাবুদ্দিন নামে বাংলাদেশি এক তরুণ আটটা-পাঁচটা কাজ করেন একটি ফার্নিচার কোম্পানিতে। ছুটির দিনে প্রবাসীদের আনন্দ ভ্রমণ ও পিকনিকে নিয়ে যাবেন বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। মালয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘোরাবেন, দেখাবেন, আনন্দ দিবেন স্বদেশ ও স্বজন ছেড়ে দূরে থাকা প্রবাসীদের। সেই জন্য গড়ে তুলেছেন 'ট্রাভেল স্টোরিস'।
ক্যামেরোন হাইল্যান্ডস ভ্রমণ তার প্রথম উদ্যোগ। তার পরবর্তী ভ্রমণ-লক্ষ্যস্থান ‘মালাক্কা প্রদেশ’। আগামি কোরবানি ঈদের পরের দিন প্রবাসী ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে যাবেন মালাক্কা প্রদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |