শেষ হলো ওয়াশিংটন ডি.সি. বাংলা বইমেলা

শেষ হলো ওয়াশিংটন ডি.সি. বাংলা বইমেলা, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সংগঠন ‘আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন’ এর আয়োজনে এবারের মেলার স্লোগান ছিলো ‘বিশ্বজুড়ে বাংলা বই’।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 07:22 AM
Updated : 26 June 2019, 07:22 AM

শনি ও রোববার ওয়াশিংটনের আর্লিংটনে শেরাটন পেন্টাগন সিটির বলরুমে দুই দিনব্যাপী এ মেলায় দেশ ও প্রবাসের কবি-লেখক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পাঠকের সমাগম ঘটে।

প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে বাংলা বই ও প্রবাস প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি চালু রাখতে ওয়াশিংটন ডি.সি. দ্বিতীয় বইমেলা শুরু হয় শনিবার সকালে। এতে সূচনা বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান সমন্ময়ক সামিনা আমিন। তারপর ‘বিশ্ব মানব হবি যদি শাশ্বত বাঙ্গালী হ’ নামে শোভাযাত্রায় মেলা শুরু হয়।

মেলার মিডিয়া পার্টনার ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ওয়াশিংটন সংবাদ, বিষের বাঁশী, আলাপন ও ডিসি বাংলা। বইমেলার অফিসিয়াল পার্টনার ছিলো বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল, বর্ণমালা শিক্ষাঙ্গন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়াশিংটন ডিসি ও সেতার নিকেতন।

মেলা উপলক্ষে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বাণী পড়েন আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয়, তথ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বাণী পড়েন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক মো. ঊল্লাহ আমান।

নূরন্নবীকে সাহিত্য পুরস্কার দিচ্ছেন সেলিনা হোসেন

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন, দূতাবাসের উপ প্রধান কবি মাহবুব সালেহ ও বইমেলার প্রধান উপদেষ্টা কথাশিল্পী রোকেয়া হায়দার। উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আল ফারুক ও হাসান মাহমুদ।

মেলার সমাপনী দিবস রোববার এবারের মেলার সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের হাত থেকে এ পুরস্কার নেন মুক্তিযোদ্ধা-লেখক-বিজ্ঞানী ও নিউ জার্সির প্লেইনসবরো সিটির কাউন্সিলম্যান নূরন্নবী।

গত বছর প্রথমবারের মতো এ পুরস্কার পেয়েছিলেন লেখক দিলারা হাশেম। মুক্তিযুদ্ধের গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য এবার পেলেন কাদেরিয়া বাহিনীর গেরিলা নূরন্নবী। এসময় সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দারকেও সম্মাননা দেওয়া হয়।

সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা নূরন্নবী সম্পর্কে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে দুটি ইংরেজিসহ দশটি বই লিখেছেন তিনি। ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও প্রথম সিনেটের নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি নূরন্নবী যুক্তরাষ্ট্রে কোলগেট পালমোটিভ কোম্পানির ‘কোলগেট টোটাল’ ব্র্যান্ড টুথপেস্টের আবিষ্কারক। যুক্তরাষ্ট্রে নবীর ৫০টিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, সাহিত্যিক আনিসুল হক, ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক সরকার কবির উদ্দিন ও আনিস আহমেদ, সৈয়দ আল ফারুক, হুমায়ুন ঢালী, আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয়, ডিসি বইমেলা ২০১৯ এর প্রধান সমন্বয়ক সামিনা আমিন ও সচিব দস্তগির জাহাঙ্গীর।

প্রথমদিন মেলার পর্দা নামে পঞ্চকবিবের গানের অনুষ্ঠানে। এতে অংশ নেন শাহনাজ রহমান সুমি, কুমকুম বাগচী, রাজদীপ ভাদুরী, দিনার মনি ও ফয়সাল কাদের। দ্বিতীয়দিন অনুষ্ঠিত হয় সৈয়দ হারেসের পরিকল্পনায় সেমিনার। মূল মঞ্চে পরিবেশনায় ছিলেন নিতু গঞ্জালভেজের সম্পাদনায় সৃষ্টি নৃত্যালয়ের পরিবেশনা ‘নৃত্যের তালে তালে’।

এদিন ১১টি নতুন বই পরিচিতি ও লেখকদের সঙ্গে কথোপকথনের আয়োজন ছিল। এরা হলেন নুরজাহান বোস, আব্দুন নূর, এস মাহতাব আহমেদ, ওয়াহিদা আফজাল, মাহবুব সালেহ, সৈয়দ আল ফারুক, আশরাফ আহমেদ,  হুমায়ুন কবির ঢালী, নূরন্নবী, হাসান মাহমুদ ও আনিসুল হক।

বিসিসিডিআই বাংলা স্কুলের পরিবেশনার পরিচালনা করেন মহিতোষ তালুকদার তাপস, নাসের চৌধুরী, আশিস বড়ুয়া ও শিমূল সাহা। বর্ণমালা শিক্ষাঙ্গনের আয়োজনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় মেলাতে। নতুন প্রজন্মের বিশেষ আয়োজন ‘নতুনদের কথায়’ বক্তব্য দেন অনামিত্রা বড়ুয়া ও মানাল আমিন।

ছড়াকার ও কবি সন্তোষ বড়ুয়ার নতুন বইয়ের পাঠ উন্মোচন করা হয় মেলার প্রথম দিন। এছাড়া ছিল কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমান সুমির প্রথম গানের অ্যালব্যামের প্রকাশনা, সেতারশিল্পী আলিফ লায়লার একক সেতার কনসার্ট, লেখক কবিদের আড্ডা, বাংলা স্কুলের লোকজ পরিবেশনা ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ফতে মোল্লার ‘উদ্ভ্রান্ত আলাপ’, নিউ ইয়র্ক থেকে আসা ও স্থানীয় ছড়াকারদের অনুষ্ঠান ‘ছড়াটে’, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণী, ঘুঙুরের পরিবেশনা, শান্তনু বাগচীর গ্রন্থনায় শ্রুতি নাটক, গল্প বলায় ওয়াহিদা আফজাল, বাগডিসির পরিবেশনা মুনীর চৌধুরীর নাটক ‘কবর’।

গান শোনান ফয়সাল কাদের, লাবনী কাদের, শারমীন শর্মী ও নাহিদ নাজিয়া। এস এম মিলনের গ্রন্থনায় ও অন্তরা বড়ুয়ার সহযোগিতায় একতারার অনুষ্ঠান ‘ভাটির টানে মাটির গানে’, লালনের গান শোনান দিনার মনি। আরও গান শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রেয়া গুহ ঠাকুরতা। বইমেলায় বিভিন্ন পর্বে যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন হিরণ চৌধুরী, মোহাম্মদ মজিদ, আবু রুমি, নাসের চৌধুরী, ড্যাভিড রানা, আশিষ বড়ুয়া ও মীর নাকিবুল ইসলাম।

মেলার উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন আতিয়া মাহজাবীন নিতু, শতরূপা বড়ুয়া, নাসরীনা আহমেদ ও ফয়সাল কাদের। মঞ্চ পরিচালনায় আরিফুর রহমান স্বপন ও আতিয়া মাহজাবীন নিতু, ব্যবস্থাপনায় ছিলেন নাজমুল আহসান। বইমেলার গ্রাফিক্স পরিকল্পনায় ছিলেন আনোয়ার ইকবাল, মঞ্চসজ্জায় হারুন উর রশিদ ও ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনায় তারেক মেহদী।

মেলাতে বাংলাদেশ থেকে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির নির্বাহী সম্পাদক মনিরুল হকের নেতৃত্বে অংশ নেয় আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশন, সর্বজন কথা, পুথিনীলয়, অংকুর, স্বদেশ, শৈলী, প্রথম আলো, প্রীতম, সময়, ঘুংঘুর, আহমেদ পাবলিশিং, নালন্দা, কল্লোল, কথা প্রকাশ, আনন্দময়ী, পঙ্খীরাজ, অন্য প্রকাশ, সন্দেশ এবং বিপিএল  প্রকাশনা।

এবারের মেলার প্রধান সমন্বয়ক সামিনা আমিন, সদস্য সচিব দস্তগীর জাহাঙ্গীর, আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফজলুর চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আরশাদ আলী বিজয় অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন আমরা বাঙালি ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. আমান উল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক জীবক কুমার বড়ুয়া ও আলতাফ হোসেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!