শিল্পাঙ্গনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘বৈশাখ বরণ’

সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল সংগঠন ‘শিল্পাঙ্গন’ এর উদ্যোগে নিউ ইয়র্কে দিনব্যাপী উদযাপন হয়েছে ‘বাংলা নববর্ষ- ১৪২৬’।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2019, 03:37 PM
Updated : 1 May 2019, 03:37 PM

লং আইল্যান্ডের হিক্সভিল টাউন হলে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে চলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।

‘সেন্টার ফর বাংলা ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কস ইনক’ বা ‘শিল্পাঙ্গন’ নিউ ইয়র্কে একটি অলাভজনক ও আয়করমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে, যা ধর্ম, বর্ণ ও রাজনীতির উর্দ্ধে থেকে বাংলায় সৃজনশীল চর্চায় নিমগ্ন রয়েছে।

নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ ও শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে আদান প্রদানও শিল্পাঙ্গনের অন্যতম লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানস্থলের এক পাশে ছিল ‘গোয়ানন্দ ভর্তা ঘর’ নামে বৈশাখী খাবারের আয়োজন। যেমন সাজসজ্জা তেমনি পরিবেশনায়  অভিনবত্ব সকলকে অভিভূত করেছে।  এর পাশে বাঙালি পোশাক, যেমন- শাড়ি, সালোয়ার কামিজসহ অলংকার- এর পসরা সাজিয়ে বসে বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠান।

দূপুর ২টায় বাংলা নববর্ষ উৎসবের উদ্বোধন করা হয় বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে। সাঈদা হোসেন মৌ-এর উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল শিশু, কিশোর ও বড় শিল্পীদের বৃহৎ দলের মঙ্গল শোভাযাত্রা; যা শুরু হয় মিলনায়তনের প্রবেশদ্বার থেকে। ঢাক-ঢোলের বাদ্যে বর্ণাঢ্য প্লাকার্ড নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা মিলনায়তন প্রদক্ষিণ করে মঞ্চে ওঠে।

 শিল্পাঙ্গনের বৈশাখী উৎসবে ফেরদৌস আরা।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পাঙ্গনের শিল্পীরা।

এরপর মঞ্চ আলোকিত করে উঠেন বাংলা আধুনিক ও লোক সঙ্গীতের পুরোধা শিল্পী দুলাল ভৌমিক।

শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে আকতার কামাল দুলাল ভৌমিককে উত্তরীয় প্রদান করেন।

এরপর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে প্রধান অতিথি মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে নববর্ষ উৎসবের উদ্বোধন করেন। আমর আশরাফের স্বাগত বক্তব্যের পর শিল্পী দুলাল ভৌমিক সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।

শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা-যা বিরতিহীনভাবে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

একক নৃত্য পরিবেশন করে নুসায়বা কবির ও সামায়রা মাহিবা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পাঙ্গন একাডেমি নৃত্য বিভাগ এবং প্রিয়া ড্যান্স একাডেমি। সেখানে অতিথি শিল্পী হিসেবে অংশ নেন প্রিয়া ডায়েস। কবিতা আবৃত্তি করেন মৌসুমী বড়ুয়া এবং মোহাম্মদ শানু। কৌতুক পরিবেশন করেন আহমেদ নাসিম।

বাংলাদেশের প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী পরিবেশনা উপস্থাপন করেন কিশোর, তরুণ ও পরিণত বয়সের এক ঝাঁক শিল্পী। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন সোনিয়া হক এবং শব্দ ব্যবস্থাপনায় মাহবুব রশীদ।

বিশেষ কবিতার আসর ‘হে রুদ্র বৈশাখ’-এ আমন্ত্রিত ও শিল্পাঙ্গনের শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল অসাধারণ। আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পীর মধ্যে ছিলেন শরফুজ্জামান মুকুল, শিরীন বকুল, গোপন সাহা ও মঞ্জুর কাদের।

শিল্পাঙ্গনের পরিবেশনা কবিতা ‘আমার বন্ধু নিরঞ্জন’ এক নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি করে যেখানে অংশ নেন নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ শানু, মৌসুমী বড়ুয়া এবং দীপ্তি বড়ুয়া। কবিতার পর্ব সঞ্চালনা করেন নাদিরা আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রিয়া ডায়েস ও শিরিন বকুল।

শিল্পাঙ্গনের সঙ্গীত পরিবেশনা দু'টি পর্বে উপস্থাপিত হয়। প্রথম পর্ব ‘বোশেখের রং’-এ একক, দ্বৈত ও ত্রয়ী গান পরিবেশন করেন সাইফুল্লাহ পারভেজ, বিদিশা দেওয়ানজী, দীপ্তি বড়ুয়া, মৌসুমী বড়ুয়া, ফারজানা সুলতানা, শাহপার ইসলাম, মাহনাজ হাসান, মোহাম্মদ শানু, নাজিদা সায়েদ, ইশরাত কুমু, তাসফিয়া রুবাইয়াৎ এবং সায়েম শাহরিয়ার।

নজরুল ইসলামের গ্রন্থনায় পর্বটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট অভিনয় ও আবৃত্তি শিল্পী শিরীন বকুল।

দ্বিতীয় পর্ব ‘এসো হে নতুন’-এ বাংলা নববর্ষ ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপর একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিদিশা দেওয়ানজী, দীপ্তি বড়ুয়া, মৌসুমী বড়ুয়া, ফারজানা সুলতানা, শাহপার ইসলাম, মাহনাজ হাসান, মোহাম্মদ শানু, ইশরাত কুমু, তাসফিয়া রুবাইয়াৎ, সামিনা আশরাফ, ইশরাত আহমেদ, সোনিয়া হক, সোনিয়া পান্না, সায়েম শাহরিয়ার, মাহমুদ চৌধুরী, আরিবাহ আহমেদ, নুসায়বা কবির, সামায়রা মাহিবা, শানিল আশরাফ, রাই সরকার এবং আয়ানা মাহিবা। সঙ্গীত পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন বিদিশা দেওয়ানজী। সহযোগিতায় সৌগত সরকার।

আবৃত্তিতে নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ শানু ও মৌসুমী বড়ুয়া। গ্রন্থনায় নজরুল ইসলাম। তবলায় সঙ্গত করেন তপন মোদক, অক্টাপ্যাডে সজীব মোদক, গিটারে আকাশ আহসান এবং মোহাম্মদ শানু। শিল্পাঙ্গনের ভাব সঙ্গীতের কথা লিখেছেন নজরুল ইসলাম এবং সুর করেছেন বিদিশা দেওয়ানজী।

লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টি নির্বাহী দপ্তর থেকে নববর্ষ উৎসবে পাঁচ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দেয়া হয়। এরা হলেন- ফেরদৌস আরা, অনুপ বড়ুয়া, দুলাল ভৌমিক, শিরীন বকুল এবং প্রিয়া ডায়েস।

 নাসাউ কাউন্টির প্রতিনিধি তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন এবং আকতার কামাল পর্বটি উপস্থাপনা করেন।

শিল্পাঙ্গনের বাংলা নববর্ষ উৎসব আয়োজনে যেসব পৃষ্ঠপোষক সহযোগিতা দেন তাদের বরণ করা হয় ফুল দিয়ে।

বৈশাখী নৃত্যে শিশু-শিল্পীরা।

নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মঞ্চে উল্লেখ করা হয় পিন্টেল কফি, নিউ ইয়র্ক লোক্যাল মেডিক্যাল কেয়ার, ওয়েল কেয়ার ইন্স্যুরেন্স, এলাইড মর্টগেজ গ্রুপ, হাব ব্যাংক, ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ার, জেরোন ল্যাবরোটরিজ, রুবেক্স ফার্মেসি, গুলশান ফার্মেসি, ব্লু ওসেন ওয়েলথ সলিউশন্স, হেল্থ ফার্স্ট, কাবকো ফার্মাসিউটিক্যালস, লং আইল্যান্ড সিটি কেমিস্ট, রেজাউল করিম, ইউনাইটেড নর্দার্ন মর্টগেজ ব্যাঙ্কার্স, মাস মিউচুয়ালস, এবং বিশ্ব রং-কে।

শিল্পাঙ্গনের বাংলা নববর্ষ উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দু'জন প্রতিথযশা শিল্পী। নজরুল, ধ্রুপদী ও আধুনিক গানের প্রখ্যাত শিল্পী অনুপ বড়ুয়ার কণ্ঠের জাদুতে দর্শক হারিয়ে যান। এরপর মঞ্চ আলোকিত করেন বাংলাদেশ থেকে আগত কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরা। শিল্পীর কথায় ও সুরে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন।

সারাদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করেন বেবী আজিজ।

আমর আশরাফের সার্বিক সমন্বয়ে, ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামালের সুযোগ্য ব্যবস্থাপনায়, মো. নজরুল ইসলামের গ্রন্থণায় দীর্ঘ অথচ সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত বাংলা নববর্ষ উৎসব লং আইল্যান্ড তথা নিউইয়র্কে এক মাইলফলকের সূচনা করে।

অনুষ্ঠানে পোশাক সরবরাহ করে বিশ্ব রং এবং শব্দ ও আলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন নিবিড় খান। শিল্পাঙ্গনের উপদেষ্টা রাহাত হোসেন নাজু, আবুল কালাম আজাদ, রোজিনা কবির, মো. রফিকুল ইসলাম, রাজিবুল হক ও শাহাব আহমেদ, এবং শুভাকাঙ্খী মাহবুবুর রশীদ, মো. নুরুর রহমান, ইকবাল ইসলাম ও স্বপন কবিরের অবদানের ফসল বাংলা নববর্ষ উৎসব এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে অনেকে অভিমত পোষণ করেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!