নিউ ইয়র্কে মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে সপরিবারে যোগ দেন জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, কনসাল জেনারেল, জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
ভারত, শ্রীংলকা, নেপাল, সৌদিআরব, মিশর, ইতালি, ব্রাজিল, বেনিন, এন্ডোরা, বারবাডোস, কলম্বিয়া, এস্তোনিয়াসহ চল্লিশ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও পদস্থ কূটনীতিকরা অংশ নেন বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে। এছাড়াও ছিলেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বরেণ্য নারীরা।
মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনকে বাঙালি সংস্কৃতির উপাদান যেমন ঢাক-ঢোল-একতারা, পালতোলা নৌকা, ডালা-কুলা, তালপাতার পাখা, নকশীকাঁথা, মাটির পুতুল, মাটির থালা-বাসন, কাঁচের চুড়ি, মাছ ধরার পলো, পালকি, পাটের সুতার সিকা, আলপনা ও নানা-বর্ণের ব্যানার-ফেস্টুন-বেলুন ও শাড়ি দিয়ে সাজানো হয়।
বিকেল সাড়ে ৫টায় বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং তার স্ত্রী ফাহমিদা জাবিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার উপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বর্ণিল এই অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বশুরু হয় বাংলাদেশ মিশনের কূটনীতিকগণের সন্তানদের দলীয় নৃত্যের মাধ্যমে।
‘মাটি চলো’ শিরোনামের গানের প্রেক্ষাপটে এ দলীয় নৃত্য ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ‘এলোরে নতুন বৈশাখ’ গানের সাথে দ্বৈত নৃত্য, আবার আসিব ফিরে কবিতা আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় গান ‘ইতন পেঘি মেঘি’ এর সাথে একক নৃত্য, ‘ও পৃথিবী’ গানের সাথে মিশনের কর্মকর্তাদের ছেলে-মেয়েদের দলীয় নৃত্য এবং সবশেষে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীদের পরিবেশিত রবীঠাকুরের কালজয়ী বৈশাখী গান ‘এসো হে বৈশাখ’ দলীয় সঙ্গীতটি অতিথিদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় বাংলা সংস্কৃতির চিরায়ত ধারার সাথে।
অতিথিদের মুহূর্মুহূ করতালিতে সিক্ত হন শিল্পীগণ। বৈশাখী সন্ধ্যার আনন্দঘন এ আয়োজন বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত মহানগরী নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনকে পরিণত করে একটুকরো বাংলাদেশে।
বৈচিত্র্যময় পোশাক ও বিচিত্র রং এর সমাহারে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয় পুরো আয়োজন জুড়ে। সৌন্দর্য্যের ছটায় তৈরি হয় এক অনাবিল শান্তির আবহ। ভিনদেশী, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রায় দুই শরও বেশি মানুষ এ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
খাবার মেনুতে ছিল ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি, নাড়ু, মুড়ি-মুড়কি-মুয়া, সাজ-বাতাসা, পায়েস, মিষ্টিসহ অন্যান্য বাঙালি খাবার।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বিদেশী অতিথিদের সামনে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরবণ তুলে ধরেন।
তিনি তাদেরকে জানান, বাংলা বর্ষবরণের এই ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ ধারণ করে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।”
গতবছরও বাংলাদেশ মিশন বিদেশিদের সাথে নিয়ে বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপন করে।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |