প্রবাসের আলাপচারিতা: আঁখি জানালেন অভিনয়ে ফেরার কারণ

পরিচিতি পেতে পারতেন অনেক ক্ষেত্রেই। অভিনয়, উপস্থাপনা, মডেলিং, গান বা লেখালেখি যে কোনও অঙ্গনে তিনি স্থান করে নিতে পারতেন। তিনি হতে পারতেন ব্যবসায়ী। অথবা অন্য কোনও পেশায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন নিজেকে। তার ভাষায়, ‘দু:সাহস করিনি। অনেক কিছু করতে গিয়ে দ্বিগবিদিক ছুটোছুটি করিনি। সঙ্গীতশিল্পী হতে চেয়েছি।‘

হ্যাপি রহমান, সিডনি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2019, 02:53 PM
Updated : 12 April 2019, 02:53 PM

সেই পথে অনেকটা পথ হেঁটেছেন এবং বাংলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার ব্যাপক পরিচিতি তৈরি হয়েছে মূলত আধুনিক সঙ্গীতের ক্ষেত্রে।

আঁখি আলমগীর একজন শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হতে চেয়েছেন সেই শুরু থেকেই। সঙ্গীতাঙ্গণে আঁখি আলমগীর একটি নক্ষত্রের নাম। যিনি এদেশের শ্রোতা-ভক্তদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য শ্রুতিমধুর গান। 

আঁখি আলমগীর পুরোদস্তর একজন গানের শিল্পী কিন্তু এর বাইরেও তিনি মডেলিং, অভিনয় ও উপস্থাপনায় সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। শিশুশিল্পী হিসেবে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পরবর্তীতে অভিনয়ে যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নাম লেখাননি এ অঙ্গনে। তবে, ক্ষেত্রবিশেষে কাজে ভিন্নতা আনতে গায়িকা আঁখি-কে ভেঙেছেন বারবার।

কণ্ঠে সুরের তরী বেয়ে পাল তুলেছেন গানের ভুবনে । আশির দশকে 'ভাত দে' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর তাকে আর অভিনয়ে দেখা যায় নি। অভিনয়ে দীর্ঘ বিরতির পর ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে দর্শক-শ্রোতাদের সামনে আবারও হাজির হচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী আঁখি। বর্তমানে টেলিভিশনের পর্দা বা মঞ্চে এর সত্যতা মেলে নিয়মিত।

আঁখি আলমগীর সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক রাজধানী সিডনি সফরে এসেছিলেন। দেশের বাইরে বড় আকারে যে কয়টি ‘বৈশাখী মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়, সিডনি অলিম্পিক পার্কের এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামে তার একটি হয়।

এ মেলায় এটি ছিল আঁখি আলমগীরের দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ। গত ২৩ মার্চ শনিবার দিনব্যাপী এ মেলায় আমন্ত্রিত শিল্পী হয়ে এসেছিলেন তিনি ।

সেই সময়ে আঁখি আলমগীরের সাথে কথা হয়। বিশেষ আলাপচারিতার সংক্ষিপ্ত কথোপকথন তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: অভিনয় দিয়ে শুরুটা হলেও মাঝে বিরতি এখন আবার সদর্পে অভিনয়ে আঁখি আলমগীর, এর নেপথ্য রহস্য কি?

আঁখি আলমগীর: দেখুন ব্যক্তি জীবনে আমি একেবারেই সাদাসিদে। পেশাগত কাজের বাইরে নিজের সংসারে সময় দিতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি । বলা যায়, আমার দুনিয়াটা দুই ভাগে করে রেখেছি। গানটাকে আমি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। জীবন-জীবিকার তাগিদে গান করি। এটাকে আমি চাকরি মনে করি। প্রফেশনালিজম না থাকলে চাকরিতে সাফল্য ধরা দেয় না। জীবন ও দর্শন-চিন্তার বিচ্ছুরণ যখন নাট্যকার মঞ্চ বা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন, তখনই নাট্যকার সার্থক। ঠিক তেমনি একজন কন্ঠশিল্পী বা অন্য যে কোনও পেশাজীবী যখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে দর্শন-চিন্তার সঠিক ও সুন্দর প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন তখনই ব্যক্তিটি সফল। বর্তমানে গান শুধু শোনার বিষয় নয়, এটি দেখার ও উপস্থাপনেরও বিষয় । শিল্প চর্চা একটি অনন্ত যাত্রা। এক্ষেত্রে মূলধারা ঠিক রেখে নতুনত্ব সংযোজন হতে পারে । যাতে সব বয়সী শ্রোতা-দর্শকের মনোযোগ কাড়ে! এ চিন্তা থেকেই অনেকগুলো মিউজিক ভিডিও-তে পারফরমেন্স করেছি । আর এভাবেই অভিনয়ে ফেরা... (হাসি)।

প্রশ্ন: আঁখি আলমগীর অত্যন্ত সুপরিচিত নাম । যতক্ষণ মঞ্চে থাকেন, দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়ে । গানের পাশাপাশি রয়েছে তার সদা উচ্ছল, বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং ছন্দময় উপস্থিতি । গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র ও দেশ-বিদেশের মঞ্চে গেয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীণ। তার জনপ্রিয়তায় এখনো চিড় ধরেনি এতোটুকু ! ব্যক্তি আঁখি এ বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আঁখি আলমগীর: কোনও কিছুই পূর্বপরিকল্পনা করে হয়নি। বাড়িতে বাবা-মা চাইতেন আমার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে শেষ হোক । পাশাপাশি বাড়িতেই ওস্তাদের কাছে ক্লাসিক্যাল গানে তালিম নেয়া । আমাকে শিল্পী বানানোর মনোবাসনায় বাবা-মা কখনই কোন কিছু করেননি । তবে, যেহেতু আমার বেড়ে উঠা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। বাবা খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর, মা প্রখ্যাত গীতিকবি খোশনূর বেগম । তাদের কল্যাণে বাড়িতে সংস্কৃতমনা নামীদামী মানুষের যাতায়াত দেখেছি। বহু গুণীজনের স্নেহ-সান্নিধ্য পেয়েছি, এসবের ছাপ-ই হয়তো আমার আজকের আঁখি আলমগীর হয়ে উঠার পেছনে মূল কারণ।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত একটা প্রশ্ন ছিলো। অনুমতি পেলে আপনার শ্রোতা-ভক্তদের পক্ষ থেকে করতে চাচ্ছি?

আঁখি আলমগীর: জ্বি অবশ্যই।

প্রশ্ন: নিন্দুকেরা বলেন আঁখি আলমগীর কন্ঠশিল্পী না হয়ে অভিনয় শিল্পী হলে ভালো করতেন। যেভাবে নেচে গেয়ে মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করেন...

আঁখি আলমগীর: আঁখি মিলনে বিশ্বাস করে, বিচ্ছেদেও! গান যেমন শোনার বিষয় তেমনি দেখারও বিষয়। এই দেখা ও শুনতে পারাটা যখন একই সঙ্গে সম্ভব সেটার স্থায়িত্ব বেশি। চলচ্চিত্র এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হতে পারে— গল্পের প্রেক্ষাপটে যে দৃশ্যপট তৈরি হয় দর্শক কল্পনায় সেখানে নিজেকে ভাবতে ভালোবাসেন । কখনো মিলনে, কখনোও বা বিরহ-বিচ্ছেদে। এর প্রভাব রয়ে যায় দর্শক-শ্রোতা মনে। আমি একজন পেশাদার শিল্পী। দর্শক-শ্রোতা পয়সা দিয়ে টিকেট কেটে নিশ্চয়ই শিল্পী আঁখি-র গোমড়ামুখ দেখতে আসবেন না! শিল্পীরা মূলত এন্টারটেইনার। বিশ্বের বিখ্যাত শিল্পীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় তারা স্ব-ক্ষেত্রে নিপুণ দক্ষতায় নিজেকে তুলে ধরেছেন । কথা ও সুরে যদি অভিব্যক্তি ফুটে উঠে সেটা বাস্তব মনে হয়। আর নাচার যে বিষয়টি, কথায় আছে—"নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা" (আবারও হাসি)। আমি হাজার দর্শকের সামনে গাইবো, হাততালি চাইবো, অথচ দর্শকের আনন্দে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারবো না… এ যেন শিল্পীসত্ত্বার দ্বৈরথ!

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!