দুই দেশের বিজয় দিবস পালন করলো আমিরাত প্রবাসীরা

বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দুই দেশেরই স্বাধীনতার বছর ১৯৭১। বাংলাদেশের ১৬ ডিসেম্বর আর আরব আমিরাতের ২ ডিসেম্বর।

>> জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 05:28 AM
Updated : 6 Dec 2018, 05:28 AM

আমরা ৩০ লাখ শহীদের রক্ত দিয়ে কিনেছি আমাদের স্বাধীনতা। আর সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন ছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাতেররাষ্ট্রগুলো। এ ফেডারেল রাষ্ট্রগুলো একসময় ‘ট্রুসিয়াল স্টেটস’ নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ অধিগ্রহণ থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭১ সালে দেশগুলোস্বাধীনতা লাভ করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্ণাধ্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গত ২ ডিসেম্বর তাদের ৪৭তম জাতীয় দিবস পালন করে। এ উপলক্ষে আরব ঐতিহ্যের আইওলা নৃত্যগীতের আসর, লেজার শো, উটের দৌড় প্রতিযোগিতা, আতশবাজি উৎসব ও কনসার্টে মেতে ছিল রাজধানী আবুধাবিসহ সারা দেশ।

এবার দুই দিনের ছুটির সঙ্গে আমিরাতের জাতীয় দিবসের রোব ও সোমবার দুই দিনের ছুটি যুক্ত হওয়ায় ৪ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে সর্বত্র দেশি-বিদেশি মানুষের মধ্যে ছিল আনন্দের উচ্ছ্বাস। আর তাই পদচারণায় মুখর ছিল উৎসবের প্রতিটি ভেন্যু।

এ বছর দেশটির জাতির জনক শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের জন্মশতবার্ষিকী হওয়ায় সালটি ‘ইয়ার অব যায়েদ’ ঘোষিত হয় এবং আমিরাতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিনা জেল জরিমানায় দেশত্যাগ বা অবস্থান বৈধ করার সুযোগ দেওয়াসহ নানা কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়।

আবুধাবির কর্নিশ লেক পার্ক, ফর্মাল পার্ক প্রতি বছরের মতো এবারও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দখলে চলে যায়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন প্রবাসী সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, খেলাধুলাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে।

বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের জাতীয় পতাকা নেড়ে ও আমিরাতের জাতীয় পোশাকে সেজে, আমিরাতের জাতীয় পতাকার ফেইস পেইন্টিং করে এদেশে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি প্রজন্মের শিশুরা দেশটির প্রতি তাদের ভালোবাসা জানায়।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি আবুধাবি, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আবুধাবি, বৃহত্তর যশোর জেলা প্রবাসী সমিতি,শেখ খালিফা বিন যায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠন দিনব্যাপি নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে। এতে বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ বিমান, জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ সমিতির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

স্বাধীনতা লাভের পর আমিরাতের জাতির জনক শেখ যায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের প্রচেষ্টায় আমিরাতগুলোর কনফেডারেশানই হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। দেশটি বাংলাদেশের যুগপৎ দ্বিতীয় বৃহত্তম জনশক্তির বাজার এবং রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখন এক বিলিয়ন ডলারের ওপর।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আমরা আগামী বছরগুলোয় ৩-৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নিত করার চেষ্টা করব। এজন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে আমাদের চেষ্টা থাকবে।”

বর্তমানে আমিরাতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রায় পঞ্চাশ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আনুমানিক ৮ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে এ দেশটিতে। অনেকেই চাকরি বা ব্যবসাসূত্রে দুই বা তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন দেশটিতে।