ফাইনালে আনন্দাশ্রুর জন্য প্রস্তুত আমিরাতের বাংলাদেশিরা

পাকিস্তানের সাথে আমাদের একটা রসায়ন সবসময় কাজ করে আর তার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল ওরাই, একাত্তরের কালো দিনগুলোয়।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2018, 03:36 PM
Updated : 27 Sept 2018, 04:04 PM

বুধবার কানায় কানায় পূর্ণ আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টানা উত্তেজনায় থাকা বাংলাদেশি দর্শকদের মনে যে আকাঙ্ক্ষা কাজ করছিল, এশিয়া কাপের ফাইনালে হারুক বা জিতুক সমস্যা না, কিন্তু পাকিস্তানের সাথে খেলে যেন বাংলাদেশ জেতে। এই জেতা তাদের কাছে শিরোপা জেতার চেয়েও বেশি চাওয়ার ছিল যেন!

অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী  টাইগারদের হাতে যখন নাস্তানাবুদ হওয়া পাকিস্তানিদের একেকটি উইকেটের পতন হচ্ছিল, তখন ‘বাংলাদেশ', ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে ফেটে পড়ছিলেন টিম বাংলাদেশের সমর্থকরা। লাল-সবুজের পতাকা দুলিয়ে, ছোট বড় টাইগার উঁচিয়ে, ‘নাগিন নেচে’ অপূর্ব এক ছন্দের দোলায় দুলছিলেন সবাই। আর যখন জয় এসেই গেল তখন তো তাদের মনে বাঁধভাঙ্গা আনন্দের ঢেউ।

আমিরাতের সবুজ শহর আল-আইন থেকে পেশায় প্রকৌশলী বিকো রায় খেলার মাঠে এসেছিলেন স্ত্রী ইংকি রায় আর শিশুকন্যা ইয়ানাকে। কেমন লাগলো দেশের খেলা দেখে জানতে চাইলে ইংকি রায় বললেন, "এখানে আসার পর মনে হলো আমরা প্রবাসে নয়, যেন বাংলাদেশে খেলা দেখছি। আর আজকের এ জয় আমার জন্য, সারা জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। নিজেকে একজন বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে বেশ ভালো লাগছে।"

দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশd ট্রাভেল এক্সপার্ট আলী আহসান এ জয়ের আনন্দে উদ্বেল ছিলেন। অনুভূতি জানাতে গিয়ে বললেন, “ভাই আমাদের মেইন দুই টাইগার তামিম আর সাকিব নাই। এই পর্যন্ত মাত্র তিন বা চারজন টাইগার ভাল খেলেছেন। ফাইনালে যদি সব টাইগার ভালো খেলতে পারেন তাহলে ইন্ডিয়াকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।"

সাবেক ফুটবলার ও আবুধাবি প্রবাসী সংগঠক শওকত আকবর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “খেলা চলাকালে সাথে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট অপারেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ দলের এ যাবত কালের সেরা ফিল্ডিং ছিল গত  খেলায়। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর সাকিব তামিম ছাড়া, বাংলাদেশ তাদের সেরাটা খেলেছেন পাকিস্তানের সাথে।”  

আবুধাবি বিশ্বিবিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন হিরো বল্লেন, “পাকিস্তানের সাথে জয় আমাদেরকে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ দিয়েছে। এভাবে খেলতে আমরা ভারতকে পরাজিত করতে পারব।”

যেমনটা ধারণা করা গিয়েছিল বাংলাদেশের এ বিজয়কে আমিরাতের দুটি সেরা ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস ও গালফ নিউজ ঠিক সেভাবেই খুব ‘লো প্রোফাইল কাভারেজ’ দিয়েছে। খালিজ টাইমস সিঙ্গেল কলাম ট্রিট দিয়ে লিখেছে ‘ইটজ বাংলাদেশ ভার্সাস ইন্ডিয়া ইন এশিয়া কাপ ফাইনাল’।

গালফ নিউজের টপ নিউজ লিস্টে নেই এই বিজয়ের খবর। স্পোর্টস পেইজে, ‘ইন্ডিয়া রেডি টু টেইম ডিপ্লেটেড বাংলা টাইগার্স ইন দুবাই?"

খেলায় পাকিস্তান জয়প্রত্যাশী থাকলেও তাদের দর্শক বা সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বল্প। উপস্থিত দর্শকদের ৯০ভাগই ছিলেন বাংলাদেশি।

দেশি খেলোয়াড়দেরকে উজ্জীবিত করার জন্য তারা ড্রামের তালে তালে নেচে গেয়ে নানা ধরনের ফেস্টূন প্লাকার্ড উড়িয়ে- ‘জাগো জাগো/বাংলাদেশ জাগো’ সহ নানা শ্লোগানে সরগরম করে রাখেন মাঠ।

রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে তারা যেমন দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন তেমনি এভাবেই দেশের যে কোন প্রয়োজনে এভাবেই তারা সাড়া দেন, থাকেন পাশে।

খেলা শেষে তাই দেশের নাম যখন বিজয়ী হিসেবে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে  থাকে স্কোরবোর্ড আলো করে, তখন কোথাও সে নিজেকে একটু আড়াল করে মুছে নেয় আনন্দাশ্রুটুকু।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের দৃষ্টি এখন দুবাই, ভারতের সাথে এশিয়া কাপের ফাইনালের দিকে, আবার উড়ুক লাল সবুজের কেতন এই মরুবালুকাবেলায় সে শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা!

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!