প্রবাসীরা দলের জয়ে থাকেন পরাজয়েও থাকেন

মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে দেশের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভালোবাসার মহড়া। সপ্তাহ শেষে বাংলাদেশি অ্যাসেম্বলি পয়েন্টগুলোতে প্রবাসীদের ভিড়-বাট্টা আর নেই। দুবাই শারজাহ থেকে কেউ একবার ছুটছেন আবুধাবি, আবার আবুধাবির দর্শকরা ছুটছেন দুবাইয়ে।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2018, 09:57 AM
Updated : 22 Sept 2018, 10:07 AM

একটাই উদ্দেশ্য- বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যেন উৎসাহ পান, মনে করতে পারেন যেন তারা দেশের মাটিতেই খেলছেন। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দাপটে খেলে আমিরাতের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের মনে যে অদ্ভুত এক আশার পিদিম জ্বেলেছিল টাইগাররা, ভারত আর আফগানিস্তানের সঙ্গে ততটাই মনোভঙ্গের কারণ হয়েছেন তারা। তবু বাঙালি নিত্য বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে অবিরাম যুদ্ধ করে জিতে যাওয়ার জাতি।

আজ তাই তারা পূর্ণ উদ্যমে। ১৩৭ রানে জয়ের পর আফগানদের সঙ্গে ১৩৬ রানের হারকে তারা আমলে আনছেন না। আমলে আনছেন না ভারতের সঙ্গে হারকেও। এখনও সুযোগ রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে তারা দলে দলে গিয়ে টিম বাংলাদেশকে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। টিম বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ড্রামের ছন্দময় তালে নেচে গেয়ে লাল সবুজের পতাকা দুলিয়ে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের সমর্থন দিচ্ছেন।

শুক্রবার আবুধাবি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছিলেন আবুধাবি ওয়াটার ইলেক্ট্রিসিটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত প্রকৌশলী মোহাম্মদ আফজাল। ২৫ বছরের প্রবাস জীবনে এ প্রথম বাংলাদেশের খেলা দেখছেন।

তিনি বলেন, “ভাই, আমরা তো আজ হারতে আসিনি, অনেক আশা করে নিজের দেশের খেলা দেখতে এসেছিলাম জিতবো বলে, কিন্তু জয় অধরাই রইলো।”

বাংলাদেশি মুজিব, সোলায়মান ও মুসা এসেছেন আবুধাবি ওয়েস্টার্ন রিজিয়নের বিদা যায়েদ থেকে। বাংলাদেশি মালিকানাধীন সালেহ গ্যারেজে কেউ অটোমেকানিক কেউ ড্রাইভার। বাংলাদেশের খেলা আছে দেখতে চান বলাতে কোম্পানি মালিক ছুটি দিলেন। খেলার খারাপ দশা দেখে দূরের পথ তাই ৩০ ওভার না যেতেই ছাড়লেন স্টেডিয়াম।

আবুধাবির তরুণ ব্যবসায়ী ও সংগঠক মশিউর রহমান সবুজ বৃহস্পতিবার তার প্রতিষ্ঠানে তো ছুটিই দিয়ে দিলেন বাংলাদেশের খেলার জন্য। বিদেশের মাটিতে দেশের খেলোয়াড়রা খেলতে এসেছেন তাদের উৎসাহ দেয়া আমাদের দায়িত্ব।তাই সবাইকে নিয়ে এসেছি খেলা দেখতে, মনেই হচ্ছে না আবুধাবিতে খেলা দেখছি।

আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেন সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণ লেখক ফরহাদ হোসেন। গায়ে লাল সবুজের পতাকা জড়িয়ে বিমর্ষ চিত্তে বসেছিলেন। বললেন, “বুকভরা আশা নিয়ে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিধিবাম, তাই টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার সাক্ষীগোপাল হয়ে বসে রইলাম, পাশের দর্শক এরমধ্যে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরেছে।”

শামসুল কবীর পেশায় শিক্ষক, আবুধাবির উপকণ্ঠের বানিয়াস থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, “একেই বলে দেশপ্রেম। এত গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার বাংলাদেশির এ উপস্থিতি যেন মরুভূমির বুকে লাল সবুজের বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসার একটা শোডাউন। আমার বিশ্বাস, কিছু সময়ের জন্যে হলেও এ প্রবাসীরা তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন-সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকার হাহাকারগুলো বিসর্জন দিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন।”

আরেক প্রবাসী জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, “ক্রিকেট আমাদের আবেগের সবটুকু যায়গা নিয়ে নিয়েছে। মাঠে হাজারো দর্শকের চোখের কোণে পানি, কাঁদো কাঁদো চোখ সে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।”

ক্রিকেটভক্ত বাংলাদেশি প্রবাসী তরুণের দল কেউ জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে হাফ-ডে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে, কেউ অসুখ-বিসুখের বাহানায় অফিস কামাই করে দেশের খেলা দেখতে এসেছেন। দূর-দুরান্ত থেকে আসা বন্ধুদের সঙ্গে বসে খেলা দেখেছেন, দেখিয়েছেন দেশের প্রতি তাদের দরদ। এ দেশপ্রেমের ফেরিওয়ালারা দেশের জন্য সব করেন নিঃস্বার্থ মন নিয়ে, দেশের কাছ থেকে কী পেলেন তার দিকে ফিরেও তাকান না। তাইতো দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখতে তারা এমন কিছু করেন যা পাষাণ হৃদয়কেও আবেগতাড়িত না করে পারে না।

তাই দলের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পরও তারা বুকে পাথর বেঁধে, চোখের জল মুছে বাড়ি ফেরার আগে আবুধাবি ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা পরিষ্কার করে দিয়ে গেলেন। হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে তারা দেশের জয়েও থাকেন পরাজয়েও থাকেন, আবার নতুন কোনো জয়ের আশায়।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!