নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

“জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে, সেটাতো আমাদেরই স্লোগান,” বলেন সরকারপ্রধান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 12:52 PM
Updated : 13 March 2023, 12:52 PM

জনগণ যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই সরকার নির্বাচন কমিশনকে ‘স্বাধীন করে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী পরিমাণ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে। 

এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে সমসাময়িক নানা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন সরকারপ্রধান। সেখানে নির্বাচন প্রসঙ্গও আসে। 

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন, ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আগামী নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ হওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ সরকারই নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন করে দিয়েছে। স্থিতিশীলতার জন্য যেটা দরকার নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়। 

“নির্বাচন কমিশন সবসময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল। আমরা কিন্তু সেখান থেকেও তাদেরকে স্বাধীন করে দিয়েছি, বাজেটে তাদের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখান থেকে তারা খরচ করতে পারবে। তাদেরকে আর্থিক যে স্বাতন্ত্রতা সেটা কিন্তু আমরা দিয়ে দিয়েছি।” 

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ অবাধ, নিরপেক্ষ করেই আমরা গড়ে তুলেছি। এই কারণে জনগণ ভোটের অধিকার জনগণ প্রয়োগ করবে, জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে, সেটাতো আমাদেরই স্লোগান।” 

তিনি বলেন, “ইভিএম করতে চেয়েছিলাম, কারণ সবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেবে, খুব দ্রুত রেজাল্ট পাবে, অনেকেরই আপত্তি, যখন সবাই এত আপত্তি, তখন ঠিক আছে, এটা নির্বাচন কমিশনের উপরে, যতটুকু তারা পারে করবে। 

“তবে, করতে পারলে ভালো হত আমি মনে করি। অন্তত মানুষ তার ভোটের অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারত, একটা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারত। সেটা নিয়ে যেহেতু এতো আলোচনা-সমালোচনা, এটা আমরা আমাদের নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কারণ এটার জন্য অনেক ধৈর্য্যের দরকার। অনেকে গালমন্দ, অনেক কিছুতো শুনতে হয়। প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনে যাচ্ছি। 

“আর আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। কারণ, বাংলাদেশতো এতো টেলিভিশনও ছিল না, রেডিও-ও ছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে আমরা সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তাই সকলের সুবিধাও আছে কথা বলার। অবশ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, দেশ-বিদেশে থেকেও আমাদের সমালোচনা করে, সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে সুযোগ পেয়ে সমালোচনা করে আবার এই কথাও শুনতে হয়, কিছুই করি নাই। এটাও শুনতে হচ্ছে।” 

সমালোচনার মুখেও আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ-কর্তব্যবোধ নিয়ে এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। সক্ষম হয়েছি এ কারণে, জনগণই হচ্ছে আমাদের মূল শক্তি, জনগণ আমাদের পাশে ছিল সেজন্য।” 

এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও সেটা দূর করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যেও যখন কোভিড-১৯ দেখা দিল, একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকের ছিল যে, এটা আমরা করতে পারব কি-না বা এটা এখন আমাদের গ্রহণ করা সম্ভব কি-না, আমি কিন্তু সেখানে বলেছি, না, আমরা পারব। 

“জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাস হয়েছে, কাজেই আমরা সেই সুযোগটা নিয়েছি। এখন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা, আমরা এগিয়ে যাব। এরই মাঝে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে, ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” 

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, আমি বিশ্বাস করি, এটা কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়ত সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু মোকাবেলা করবে আমাদের জনগণই।” 

আন্দোলন-সংগ্রামে বা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সবগুলো আওয়ামী লীগ রক্ষা করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের আগে প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের উপরে উঠেছিল। 

“আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনাকালীন এই দুই বছর আর যুদ্ধকালীন সময়টা যদি না থাকত আরও অন্তত ২-৩% দারিদ্র্য আমরা কমিয়ে আনতে পারতাম। নানা কারণে হয়ত এটা হয়নি। কিন্তু এখানে থেমে থাকলেতো হবে না, হতাশ হবারও কিছু নাই। অন্তত আমি কখনো হতাশ হই না। আমার একটি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলি।”