“আমরা সকলে মিলে, দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ যদি আমরা সচেতন থাকি, সচেষ্ট থাকি, অবশ্যই আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।”
Published : 24 Mar 2025, 09:24 PM
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার আলোচনা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে ‘বিতর্কিত এবং জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, “আমরা দেখেছি অতীতের স্বৈরাচার দেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমরা কথা প্রসঙ্গে বলে থাকি, বুঝে থাকি যে, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক; সেই সেনাবাহিনীকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এক ইফতার মাহফিলে যুক্ত হয়ে দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “কদিন আগে আমরা যেমন দেখেছি, সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করার চেষ্টা হচ্ছে। ঠিক একইভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি একজন সাংবাদিক হিসেবে, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এতটুকু বুঝি, নিশ্চয় কিছু না কিছু ষড়যন্ত্র আছে। আমরা সকলে মিলে, দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ যদি আমরা সচেতন থাকি, সচেষ্ট থাকি, অবশ্যই আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।”
গেল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলেছেন তিনি।
তার ওই বক্তব্যের পর রাতে ফেইসবুক পোস্টে সেনানিবাস থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে ‘চাপ দেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
ফেইসবুকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ তিনজনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে ‘৪০ বছরের বেশি সময়’ সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।
হাসনাতের ওই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এর পর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও দাবি করেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হোক, ‘তা চাননি’ সেনাপ্রধান।
পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে এসে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে কোনো প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার’ সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই।
তাদের এমন বক্তব্যের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়; অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা মিছিল করে ‘ছাত্রলীগ’।
সোমবারের ইফতার মাহফিলে তারেক রহমান বলেন, “আমি সহজেই বুঝতে পারছি একটি মহল, তারা তাদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।আমরা একসাথে যদি কাজ করি, অবশ্যই এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সক্ষম হব। আমাদেরকে যে কোনো মূল্যে অবশ্যই এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।”
তিনি বলেন, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসুক–এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।
ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপি মিডিয়া সেলের উদ্যোগে সাংবাদিকদের সন্মানে এই ইফতার মাহফিল হয়।
‘অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে অত্যন্ত সুচতুরভাবে একটা নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে, সেই চক্রান্ত বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশকে আবার বিপদে নিমজ্জিত করবার জন্য। বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান, তাদেরকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।
“এটার পেছনে উদ্দেশ্য একটাই। অতীতে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করা হয়েছে, আজকে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যেন বিপন্ন হয়, আমরা যেন আবার অরক্ষিত হয়ে পড়ি, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, যারা দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে আজ আবার বিতর্কিত করার একটা হীন প্রচেষ্টা চলছে।”
ফখরুল বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুরা, আপনারা সবসময় জাতির বিবেক হিসেবে জাতির সামনে দাঁড়িয়েছেন, বিপদের মুহূর্তগুলোকে আপনারা অতিক্রম করে জনগণকে সঠিক সংবাদ দিয়েছেন। আপনারা সেই একই ভূমিকা পালন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
‘দেশের অস্তিত্ব বিনষ্ট করার চক্রান্ত’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “৫ তারিখের (৫ অগাস্ট) আগের যে পরিস্থিতি ছিল, সেই পরিস্থিতি যদি আবার ফিরে আসে, এই দেশের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। দেশের অস্তিত্বকে নষ্ট করার জন্য দেশে-বিদেশে বহু বিদগ্ধ কাজ করছে। গত দুই দিনের ঘটনা যদি আমরা দেখি, বহু কিছু বেরিয়ে আসবে। বিষয়টা এত সহজ না।
“আমরা কথা বললেই একজন লোক দেশে রাগ করেন, আরেকজন লোক বিদেশে বসে রাগ করেন। মনে হয়, নির্বাচনের কথা আমি বলেছিলাম। আমরা কথা বলার ৭ দিন পরে গতকাল পরশু কয়েকটা রাজনৈতিক দলের সংস্কারের মতামত জমা হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। আমি কি ভুল বলেছিলাম? সবাই কমবেশি দ্বিমত পোষণ করেছে। আমি মুখে বলেছিলাম, আপনাদের সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব হবে না। এর প্রেক্ষিতে আমার জ্ঞাতি-গুষ্ঠি তুলে গালি-গালাজ করেছে।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলে এই দেশটা কারো বাপের না। আমি মুক্তযুদ্ধ করেছি। এই দেশটা যদি আমার বাপের না হত, এই দেশটা যদি আমার দাদার বাপের না হত, তা হলে আমার হত না, এদেশটা যদি আমার না হত, তাহলে আমার ছেলের দেশ হত না।
“সুতরাং এই কথা যারা বলে, কথা সাবধানে বলবেন। যারা বলেন, এই দেশটা বাপের না। তাদেরকে আমি বলতে চাই, এই দেশটা আমাদের সকলের। এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, প্রয়োজনে আমরা লড়ে যাব।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব এই আলোচনা সভায় দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বক্তব্য দেন।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সংবাদ সংস্থা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা ইফতারে অংশ নেন।