অবিলম্বে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান সংগঠন দুটির নেতারা।
Published : 16 Jan 2025, 12:36 AM
দাবি অনুযায়ি নির্ধারিত সময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অনীহার অভিযোগ তুলে এর নিন্দা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সংগঠন দুটির নেতারা অবিলম্বে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। তারা বলেন, সরকারের নিজের বৈধতার জন্যই অবিলম্বে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দরকার।
আগের বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ’মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছিল। বুধবার সরকারকে দেওয়া এসময় শেষ হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এ ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরুর করার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার এজন্য সর্বদলীয় সভা ডাকা হয়েছে, যাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস অংশে নেবেন। এরইমধ্যে রাজনৈতিক দল ও আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কাছে এটির খসড়া পাঠানো শুরু হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে এ ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার রাতে রাজধানীর বাংলা মোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণাপত্রের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বক্তব্য দেন।
লিখিত বক্তব্য আরিফ সোহেল বলেন, "গত ১৫ দিনে প্রোক্লেমেশন ইস্যুতে সরকারের তেমন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও শুরু করেনি। আমরা সরকারের এই অনীহা ও ধীরগতির তীব্র নিন্দা জানাই।
"সরকারকে মনে রাখতে হবে, খোদ তার নিজের বৈধতার স্বীকৃতির জন্যই অবিলম্বে জুলাই প্রোক্লেমেশন জারি করা দরকার। বিদ্যমান সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের মতো আইনি বাধ্যবাধকতাহীন অনুচ্ছেদ এই সরকারের বৈধতার পূর্ণাঙ্গ ভিত্তিমূল হতে পারে না।"
তিনি বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার একদিন আগে মঙ্গলবার সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার সরকার সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে বসবে। কিন্তু গত ১৫ দিন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ কেন দেখা গেল না, এ প্রশ্নে সরকার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সরকারের মন্থর গতি এবং নির্জীব মনোভাবের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।“
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অবিলম্বে ঘোষণাপত্র প্রকাশের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আরিফ সোহেল বলেন, " এই প্রোক্লেমেশন যেন অনাগত সাংবিধানিক ও আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।"
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "ধীরগতিতে হলেও সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগেই সরকার ভিজিবল অনেকগুলো উদ্যোগ নিতে পারত। সরকার সব পক্ষকে আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে, এটা ঐতিহাসিক।"
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।”
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে এ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায়। তখন ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি বদল করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরির কার্যক্রম শুরুর দাবি জানায় সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা আছে অন্তর্বর্তী সরকারের।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ বলেন, "আমরা জুলাই প্রোক্লেমেশন জারির আহ্বান জানিয়ে এসেছিলাম। জাতীয় নাগরিক কমিটি আমাদের এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। প্রোক্লেমেশন ইস্যুতে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।”