সবটাই সম্ভব, যদি সরকার চায়: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হলে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2022, 12:49 PM
Updated : 23 July 2022, 12:49 PM

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার চাইলে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সবটাই সম্ভব, যদি সরকার চায়।"

দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, "আমরা পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা নির্বাচনে তখনই যাব, যদি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়…এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই।”

নির্বাচনের কারণে এর আগেও সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে সেসবের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

“সংবিধান বহুবার পরিবর্তন হয়েছে নির্বাচনের জন্য। ১৯৯০ সালে হয়েছে, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ তো সংবিধানের বহু অংশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। সুতরাং চাইলে অবশ্যই হবে।

"ডকট্রেইন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা আছে। সেই প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে…।"

বিএনপি মহাসচিব বলেন, "এখন এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে, জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হলে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।”

প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে ওভারসিজ করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ওকাব) এর ‘মিট দ্যা ওকাব’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তো তাই করেছিলাম, ১৯৯৬ সালে নতুন সংসদ হওয়ার পর সারারাত জেগে সংসদ আইন পাস করে আমরা পদত্যাগ করেছিলাম।

“সংসদ বাতিল করা হয়েছিল। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ১১৬টা আসনে বিরোধী দলে বসেছিল। আমরা মেনে নিয়েছি। দ্যাট ইজ ডেমোক্রেসি। সেখানে আপত্তিটা কোথায় এই সরকারের?”

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচন তখনই সম্ভব হবে, যখন দেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার থাকবে।

"ওই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে সেই কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। তার আগে নির্বাচন কোনো কমিশনের পক্ষেই সম্ভব নয়।"

আগের নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “শুধু আমাদের কথা নয়, আগের এটিএম শামুসুল হুদা যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তিনিও বলেছেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যন্ত জটিল।

"পরবর্তীকালে কেএম নুরুল হুদা সাহেব ২০১৮ সালে একটা অত্যন্ত কলঙ্কময় নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছেন, তিনিও পরে বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “বর্তমানে যিনি আছেন, তিনি তো একেবারে হাল ছেড়ে দিয়েছেন মনে হয় আরকি। তিনি অলরেডি বলেই দিয়েছেন, দলীয় সরকারের অধীনে খুব কঠিন হচ্ছে।

"এখানে যদি বিএনপি না আসে বা মূল বিরোধীদল যদি না আসে সেই নির্বাচন অর্থবহ হবে না। সেজন্য আমাদের মূল কথাটাই হচ্ছে নির্বাচনকালী তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এটাই হচ্ছে আমাদের দাবি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সবসময় সামনে থেকে প্রকাশ্যে একেবারে জনসভার মধ্য দিয়ে ঘোষণা দিচ্ছি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপিসহ অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে তারা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে কোনো নির্বাচনে যাবে না।”

রাজনৈতিক সংকটের সমাধানে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যদি কনফনট্রেশন দেখতে না চায়, মারামারি কাটাকাটি দেখতে না চায়, তাহলে সরকারকে অবশ্যই আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি…সেইভাবে তাদের কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিদেশি সংস্থা ও পত্রিকার সংবাদদাতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন ফখরুল। তার আগে দলের পক্ষে নানা বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে নেতা কে হবেন- সেই প্রশ্নে ফখরুল বলেন,“এই দলের নেতৃত্ব তো নির্ধারিত হয়ে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-তিনি আমাদের নেত্রী, তার অবর্তমানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতা। সুতরাং এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "নির্দলীয় সরকারের প্রশ্নে আমরা ২০১৪ সাল থেকে আন্দোলন করছি। আমরা সেই আন্দোলনেই আছি। আমরা যখন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামব, আন্দোলনই বলে দেবে আন্দোলনের ধারা কোন পথে যাবে।

“নির্দলীয় সরকারের রুপরেখার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন সরকার আমাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের গঠনের বিষয়ে একমত হবেন, তখনই আসবে। তার আগে না।

“সরকার যদি বলে যে, নির্বাচনকালীন সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, সহায়ক সরকার গঠন করা হবে- তখন কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করে দেখব। সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কথা বলতে চায় তখন আমরা সেটা দেখব। তার আগে তো না।”

ওকাবের আহ্বায়ক বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল ও সদস্য সচিব জার্মান নিউজ এজেন্সি-ডিপিএ’র সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মিঠু, ওকাবের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফরিদ আহমেদ এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও শায়রুল কবির খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।