নিবন্ধন পাচ্ছে সাকা প্রতিষ্ঠিত এনডিপি

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি এবার রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2013, 07:41 AM
Updated : 10 Oct 2013, 07:41 AM

১৯৯১ সালে এনডিপি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন কাদের বর্তমানে বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার নাম ব্যবহার করেই নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে দলটি।

এর আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধনের অবেদন করেও ব্যর্থ হয় এনডিপি। তারা হাই কোর্টে গেলে সম্প্রতি আদালত দলটিকে নিবন্ধন দেয়ার নির্দেশ দেয়। এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তুজা ওই রায়ের অনুলিপি গত ১ অক্টোবর ইসিতে দাখিল করে নিবন্ধনের আবেদন করেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। ২০০৮ সালে তারা যে শর্তপূরণ করে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল তা পর্যালোচনা করে এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।”   

ইসির সচিবালয়ে রক্ষিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে কমিশন সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।

কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই এনডিপি নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। আগের কমিশন শেষ মুহূর্তে যে কারণে দলটিকে নিবন্ধন দেয়নি- তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

গত জুন মাসে আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলকে নিবন্ধ দিয়ে পাঞ্জা (হাত) প্রতীক বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধনের একটি শর্তে বলা হয়, স্বাধীনতার পর দলীয় প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসন লাভ করা দল নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবে।

১৯৯১ সালে এনডিপি থেকে সাংসদ নির্বাচিত সাকা চৌধুরী ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দিলেও তার নাম দিয়ে ওই শর্ত পূরণ করে ‘বাঘ’ প্রতীকে নিবন্ধন চায় এনডিপি। কিন্তু সাকা চৌধুরী দলে না থাকায় তখনকার কমিশন নিবন্ধন আটকে দেয়।

ইসি সচিবালয়ের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানান, আবেদনকারীরা ১৯৮৯ সালে গঠিত এনডিপির মূল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন কিনা এবং দলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে কিনা- তার প্রমাণ হিসাবে নথিপত্র চায় ইসি।

এরপর ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার ইসিকে জানান, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এনডিপি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাঘ প্রতীক নিয়ে পাবনা-২ আসনে দলের চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তুজা ও চট্টগ্রাম-৬ আসনে তখনকার মহাসচিব সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

১৯৯৬ সালে সাকা চৌধুরী বিএনপিতে যোগ দিলেও দলের ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটেনি বলে দাবি করেন আলমগীর।

তিনি ইসিকে বলেন, বাঘ প্রতীক নিয়ে এনডিপি ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়। এমনকি এনডিপি চেয়ারম্যান ইসির আমন্ত্রণে অন্য রাজনৈতিক দলের মতো প্রচার মাধ্যমে ‘জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ’ দেয়ারও সুযোগ পান।

তারপরও ওই বছর নভেম্বরে ইসি জানিয়ে দেয়- এনডিপি নিবন্ধনের যোগ্য নয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে দলের চেয়ারম্যান হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত সিইসিসহ আটজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করে। কিন্তু এরই মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নতুন দল পিডিপিকে বাঘ প্রতীকে নিবন্ধন দেয় ইসি।

এরপর চলতি বছরের ৭ জুলাই হাই কোর্ট ওই রুলের নিষ্পত্তি করে এনডিপির পক্ষে রায় দেয়।

ইসির নিবন্ধন বাছাই কমিটির এক সদস্য আদালতের রায়ের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনডিপিকে সাকা চৌধুরী বিলুপ্ত করেননি বা তৎকালীন মহাসচিব হিসাবে বিলুপ্ত করার কোনো সুযোগও তার ছিল না। বর্তমান কমিটিতেও তার নাম নেই। সেক্ষেত্রে সাকাবিহীন দলটিকে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি আমলে নিয়ে নিবন্ধন দেয়া হতে পারে।”

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পথে প্রিজন ভ্যানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ছবি: নয়ন কুমার/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

রাজনৈতিক জীবনে সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে মুসলীম লীগের মনোনয়নে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এবং ১৯৯১ সালে নিজের গড়া এনডিপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর বিএনপির হয়ে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গত ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।