জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই অনলাইনে

জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্তত ছয়টি তথ্য অনলাইনে যাচাইয়ের সেবা (অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিস ) চালুর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2011, 11:42 PM
Updated : 3 June 2011, 11:42 PM
মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, জুন ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্তত ছয়টি তথ্য অনলাইনে যাচাইয়ের সেবা (অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিস ) চালুর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগ্রহের ভিত্তিতে সরকারের কিছু সংস্থা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ব্যাংক, দূতাবাস, মোবাইল ফোন অপারেটর ও পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে এ সেবার আওতায় আসছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিচিতি নম্বরে দুই ধরনের নম্বর থাকায় সে বিভ্রান্তি দূর করার উদ্যোগও নিচ্ছে ইসি।
অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিসের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কিছু সংস্থার আবেদনে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর তথ্য অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিস চালুর বিষয়ে ইসির ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমঝোতা স্মারক সই হলে শিগগির এ সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এ সেবা চালু হলে জাল পরিচয়পত্র তৈরি অথবা ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হবে।
এ বছরের শুরুতে মোবাইল ফোন অপারেটরসহ সরকারের কয়েকটি বিভাগ অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ চেয়ে আবেদন করে।
ইসির একজন কর্মকর্তা অনলাইন ভেরিফিকেশনের সম্ভাব্য পদ্ধতি সম্পর্কে জানান, এ সেবা পেতে হলে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত ফি'র বিনিময়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেেিজেস্ট্রশন ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করার পর সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠান তাদের ই-মেইলে মাস্টার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবে। এ মাস্টার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে এনআইডির ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সংখ্যক সাব-ইউজার তৈরি করতে পারবে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রকল্পের (পিইআরপি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আখতারুজ্জামান সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এনআইডি তথ্য যাচাইয়ের সেবা চালুর জন্য কারিগরিভাবে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এর ফি নির্ধারণ ও চুক্তি সম্পাদনের কাজটি সম্পন্ন হলে এক মাসের মধ্যে এ সেবা চালু করা সম্ভব হবে।
ইসির সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, "নির্ধারিত মাশুল পরিশোধের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন মাফিক জাতীয় পরিচয়পত্রধারী দেশের যে কোনো নাগরিকের সাধারণ কিছু তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পাবেন।"
তিনি জানান, কী পরিমাণ মাশুল নির্ধারণ করা হবে, তা বাৎসরিক হবে, না যাচাইয়ের সংখ্যা ভিত্তিক হবে- তা নির্বাচন কমিশনই নির্ধারণ করে দেবে। চুক্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা থাকবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর, এনবিআর এবং দূতাবাসগুলোয় নির্ধারিত চার্জের বিনিময়ে এ সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ইসি'র কাছে জানিয়েছে, এ সেবা চালু হলে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের সঠিকভাবে নিবন্ধনের কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের গ্রাহক হয়ে ফোনে চাঁদাবাজি, হুমকি ও উত্যক্ত করার দুষ্কর্ম বন্ধ হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব-এর সভাপতি জাকিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ থাকলে মোবাইল গ্রাহকদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার কিছু বিরাজমান সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
ইসির আইটি শাখার প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ সার্ভিস চালু হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবে। এর মাধ্যমে সংস্থাটি অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগুলো (নাম-বাংলা ও ইংরেজিতে, পিতা, মাতা, জন্মতারিখ ও আইডি নম্বর) তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের সুযোগ পাবে।
"ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা রোধ বন্ধ হবে এতে। পাশাপাশি গ্রাহক সেবাও দ্রুত হবে। তথ্য যাছাইয়ের জন্য কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করার দরকার পড়বে না", বলেন তিনি।
জাতীয় পরিচয়পত্রে দুই ধরনের নম্বরে বিভ্রান্তির আশঙ্কা
ইসি সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে ১৩ ও ১৭ ডিজিটের পরিচিতি নম্বর ব্যবহার হচ্ছে। এতে অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিস-এ বিভ্রান্তির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি ইসির নজরে আসায় দ্রুত কিছু সংস্থাকে অবহিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সময় ১৩ ডিজিটের পরিচিত নম্বর দেওয়া হতো। পরবর্তীতে ১৭ ডিজিটের আইডি নম্বর দেওয়া হচ্ছে।
১ জুন ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব সাবেদ উর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইসিকে জানানো হয়, ইসি'র দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রে ১৩ ও ১৭ অঙ্কবিশিষ্ট পরিচিতি নম্বর ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১৩ অংক বিশিষ্ট জিও কোডভিত্তিক আইডি নম্বর ব্যবহার করা হয়। এতে পরিচিতি নম্বর তার এককত্ব হারাতে পারে এবং একই নম্বরের পরিচয়পত্র ডুপ্লিকেট হবে। এজন্যে ১৩ অঙ্কের আগে ৪ অঙ্কের জন্মসাল যুক্ত করা হয়েছে।
"বর্তমানে ১৩ ও ১৭ অঙ্কবিশিষ্ট দুই ধরনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর চালু থাকায় বিদেশি দূতাবাস ও দেশের অন্যান্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে", বলা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো, তফসিলভুক্ত ব্যাংক, টেলিফোন কোম্পানি ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ১৭ অঙ্কের তথ্য: প্রথম চার অঙ্ক জন্মসাল, পরবর্তী দুই অঙ্ক জেলা কোড, পরবর্তী এক অঙ্ক আরএমও কোড, দুই অঙ্কের উপজেলা/থানা কোড, পরবর্তীতে রয়েছে দুই অঙ্কের ইউনিয়ন/পৌর ওয়ার্ড কোর্ড এবং সব শেষে ছয় অঙ্কের ব্যক্তিগত নম্বর।
অনলাইন ভেরিফিকেশন সার্ভিস চালু হলেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানানো হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।
দেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান প্রকল্প নেওয়া হয় ২০০৭ সালে। এর অধীনে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আট কোটি ১০ লাখেরও বেশি ভোটার তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৯ সালে হালনাগাদের সময় আরো ৪০ লাখেরও বেশি নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হন।
এ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সাড়ে ৮ কোটিরও বেশি ভোটারের বেশিরভাগই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে বলে প্রকল্প থেকে জানানো হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/এমআই/১১৩০ ঘ.