খালেদা জিয়াকে ‘জীবন থেকে সরানোর চক্রান্ত’: ফখরুল

খালেদা জিয়াকে ‘জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার’ চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2021, 09:41 AM
Updated : 19 Nov 2021, 11:28 AM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, “তাদের লক্ষ্য একটাই- এখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে এখন তারা জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, চক্রান্ত করছে। সেই কারণে তারা তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগটা দিতে চাইছে না।”

৭৬ বছর বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাকে ঢাকায় তার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার বলছে, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।

সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকালও আইনমন্ত্রী বললেন, এখানে কোনো আইনেই সুযোগ নেই তাকে বিদেশে পাঠানোর। এটা ডাহা মিথ্যা কথা।

“আইনে সুযোগ রয়েছে। ওই যে তারা আইনের কথা বলছেন ৪০১, সেই ৪০১ এর মধ্যেই বলা আছে সম্পূর্ণ এখতিয়ারটা সরকারের। সরকার চাইলে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দিতে পারেন, সরকার চাইলে তাকে বিদেশে পাঠাতে পারেন চিকিতসার জন্যে, সরকার চাইলে পুরোপুরি মওকুফ করে দিতে পারেন।”

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতির দাবিতে শনিবার ৭ ঘণ্টার গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

তাতে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে হবে। জায়গা তো পাওয়া যায় না। আমরা অনেক জায়গা চেয়েছিলাম, তারা জায়গা দেয়নি, আমরা কেন্দ্রীয় অফিসে করছি। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি হবে।

“আমরা আশা করব যে, সবাই আমাদের এই গণঅনশনে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দয়া করে আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে আসবেন। আসুন, দেশনেত্রী বিদেশে চিকিৎসার যেন সুযোগ পান সেই আন্দোলনটা জোরদার করি। সেখান থেকে আমরা আরো কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন ছাড়া কোনো মতেই এ দানবীয় সরকারকে সরানো সম্ভব হবে না। আজকের এই আলোচনায় যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, আপনার যুগপৎ অথবা একমঞ্চ- সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা শুরু করি আমাদের জায়গা থেকে। সেই আহবান আমি আগেও জানিয়েছি, এখনো জানাচ্ছি।

“আসুন আমরা সবাই একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে মিনিমাম দাবির ভিত্তিতে… মূল দাবি তো একটাই, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি- এ বিষয়ে আমরা একসাথে আন্দোলন করি এবং এদের হাত থেকে দেশকে, জনগণকে রক্ষা করি। এটা সত্য যে এটা করতে যদি আমরা ব্যর্থ হই, ভবিষ্যত প্রজন্ম কখনোই আমাদের ক্ষমা করবে না।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না  বলেন, “ঠিকমত আইনও জানে না, ইতিহাসও জানে না। এই বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার ইতিহাস নতুন নয়। উদাহরণ আছে।”

তিনি বলেন. “চিকিৎসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মত এতবড় নেত্রী মারা যাবে- এটা চুপচাপ বসে দেখা যাবে না। সেই জন্যই এই লড়াই আমাদের সবার। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই লড়াই করতে হবে।”

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ আলোচনা সভা হয়।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকিব, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির আবু তাহের, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বক্তব্য দেন।