নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নিতে বললেন কাদের

আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নিতে বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 02:53 PM
Updated : 28 Sept 2021, 03:44 PM

সামনের নির্বাচনে ‘বিতর্কিতরা’ দলের মনোনয়ন পাবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনাসভায় তার এমন বক্তব্য আসে।

নৃত্য পরিবেশনা, গান এবং কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় দলীয় সভানেত্রীর জন্মদিনের এ আলোচনাসভা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল নেতাকর্মীকে শপথ নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

“দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে দল সাজাতে হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা আগামীতে আওয়ামী লীগের টিকেট পাবেন না।”

আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এজন্য দলের মধ্যে কোনো বসন্তের কোকিল নয়, ত্যাগীদেরই জায়গা করে দিতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “গতবারতো কামাল হোসেনকে এনে আপনারা নির্বাচনে নেতা বানিয়েছেন।

“আমি আমার দলের পক্ষে, জোটের পক্ষে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে? নির্বাচন করলে নির্বাচনে আপনাদের নেতা কে?”

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, “টেমস নদীর পার থেকে পলাতক দণ্ডিত কেউ যদি নির্বাচনে নেতা হয়, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় বহন করে, বাংলাদেশে আপনাদের অপ্রাসঙ্গিক রাজনীতি আরো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। জনগণ এই দণ্ডিত পলাতক নেতাকে কোনোদিনই এদেশের নির্বাচনে নেতা হিসেবে মেনে নেবে না।”

পৃথিবীর অন‌্যান‌্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সময়মতো সংবিধান অনুযায়ী ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আজকে মাঠ গরম করবেন, পানি ঘোলা করবেন, দেশে বিশৃঙ্খলা করবেন, পরিবেশ নষ্ট করবেন, অগ্নি-সন্ত্রাস করবেন, জ্বালাও-পোড়াও করবেন?

“স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক‌্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত রয়েছে যে কোনো বিশৃঙ্খলা-সহিংসতার জবাব দিতে।”

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিএনপি আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কোনো সরকার নাই। বাংলাদেশে আর কোনোদিন এই সরকার হবে না।

“পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয় না। কোনো নিরপেক্ষ সরকার হয় না। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের সময়ই নির্বাচন হয়। তা পরিচালনা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদের কাজ হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা।”

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “শেখ হাসিনা অবিরাম পরিশ্রম করে যান। তার জীবনে কোনো লোভ নাই, মোহ নাই, পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নাই। সাদামাটা জীবন-যাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন।”

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, “দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। হতে হয়েছিল অনেক মিথ্যা মামলার আসামি। কিন্তু কোনো কিছু তাকে দমাতে পারেনি।

“অশুভ শক্তির সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে তিনি অবিচল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান এবং তা বাস্তবায়নও করেন।”

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।”

আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস‌্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, শফিউল আলম নাদেল, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সভায় বক্তব্য দেন।

জন্মদিনে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়। সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, তেজগাঁও জপমালা রানীর গির্জা এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।