আওয়ামী লীগ এখন ডুবন্ত জাহাজ: প্রিন্স

বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগে ভিড়তে চাইছে- ওবায়দুল কাদেরের এমন কথার জবাব দিলেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বললেন, আওয়ামী লীগই এখন ‘ডুবন্ত জাহাজ’ এ পরিণত হয়েছে, ফলে অনেকে এখন এই দলটিই ছাড়তে চাইবেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার পথে সরকার ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেছিলেন, আন্দোলনের সামর্থ্য হারানো বিএনপি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দলটির অনেক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিতে ‘তলে তলে’ যোগাযোগ করছে।

বিএনপির অনেকে আওয়ামী লীগে ভিড়তে চাইছে: কাদের  

প্রিন্স বলেন, “আওয়ামী লীগ এখন ডুবন্ত জাহাজ। ডুবন্ত জাহাজে কেউ উঠতে চায় না। যারা ডুবন্ত জাহাজের যাত্রী তারা নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য এসব কথা বলেন।

“বরং ডুবন্ত জাহাজ থেকে কতজন লাফিয়ে পড়ছেন নিজেদের বাঁচানোর জন্য, সেটা সামনের দিকে আপনারা দেখতে পারবেন।”

বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শাহজাহান মিয়া ও সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হানিফ সম্প্রতি পদত্যাগ করেন।

তাদের পদত্যাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিন্স বলেন, “তারা গত তিন বছর যাবত সক্রিয় না, কোনো দায়িত্বেও নেই।”

তাদের পদত্যাগের কোনো প্রভাব বিএনপিতে পড়বে না দাবি করে তিনি বলেন, “এই দুজনের কারণে বিএনপি হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাবে, এটা ভাবার কারণ নেই।

“বিএনপি একটা বিশাল একটা সমুদ্র। এখান থেকে এক দুই বালতি পানি কেউ যদি বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়, তাতে হতাশা সৃষ্টির এখানে সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।”

‘মানুষের পাশে বিএনপি আছে’

করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে বিএনপি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি- তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এই কথার জবাবে নিজেদের কাজের খতিয়ান দেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্রায় দুইশ চিকিৎসক হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা হেলপ সেন্টার চালু করা হয়েছে, অক্সিজেন সার্ভিস, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, করোনা পরীক্ষাসহ রোগীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

লকডাউনে সঙ্কটে পড়া মানুষদেরও বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়তা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপি ভাবে শুধু খালেদার স্বাস্থ্যের কথা: তথ্যমন্ত্রী  

এ প্রসঙ্গে প্রিন্স বলেন, “আপনারা দেখেছেন গত ৪ জুলাই এই লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া মুন্সিগঞ্জের উত্তর মুক্তারপুরের দিনমজুর দ্বীন ইসলাম ক্ষুধার তাড়নায় আত্মহত্যা করেছেন। অথচ সরকারের মন্ত্রী-কর্মকর্তারা হরহামেশাই বলে যাচ্ছেন তারা পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করছেন, কেউ না খেয়ে নেই, কেউ না খেয়ে মারা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।”

দ্বীন ইসলামের পরিবারকে সহায়তা দিতে স্থানীয় বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার তার বাড়িতে গেছে বলে প্রিন্স জানান।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জেলা সভাপতি সাবেক সাংসদ আবদুল হাই ওই পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেন। একই সাথে আশপাশের কর্মহীন মানুষজনকেও সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

খালেদার চিকিৎসায় ‘ইচ্ছাকৃত বাধা’

সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে চরমভাবে অসুস্থ। গত মে মাসে যখন তিনি অসুস্থ হলেন, তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হল, তখন এই আইনমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যে শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে এখন মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেই শর্ত সংশোধন করলেই তার বিদেশযাত্রা সম্ভব।

“কিন্তু এখন তিনি(আইনমন্ত্রী) ইউটার্ন নিয়ে বলছেন, সেটা করা সম্ভব নয়। এটা থেকে প্রমাণ হয়, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।”

খালেদা কীভাবে বিদেশে যেতে পারেন, সেই ‘উপায়’ বললেন আইনমন্ত্রী  

দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ- তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের সমালোচনাও করেন প্রিন্স।

তিনি বলেন, “জনগণকে রক্ষা না করে সারাদিন বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অসত্য বয়ান আর জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা।”

প্রিন্স বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্ত নন। তিনি এখনও বন্দি। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে তার সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

“আমরা স্পষ্ট করেই বলতে চাই, বার বার জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে জনগণের পক্ষে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে না।”

লকডাউনের মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে বলেও অভিযোগ করেন প্রিন্স।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, সহ বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু ও ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন।