এক্ষেত্রে বিদ্যমান ফৌজদারি কার্যবিধিতে (সিআরপিসি) সংযোজন বা নতুন আইন করার পরামর্শ কমিটির।
রোববার সংসদ ভবনে জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
ইকোসাইডকে সাধারণভাবে কোনও অঞ্চলের স্বাভাবিক প্রকৃতি ও পরিবেশের ধ্বংস হয়ে যাওয়া কিংবা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হিসেবে বোঝানো হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণহত্যা যেমন অপরাধ, ইকোসিস্টেম ধ্বংস করাও সেই ধরনের একটি অপরাধ বলে আমরা মনে করি। কারণ ইকো সিস্টেম না থাকলেও তো আমরা কেউই বাঁচতে পারব না।
“এজন্য প্রতিবেশের বিরুদ্ধে যে অপরাধগুলো হচ্ছে, সেটাকে আইনের আওতায় আনাই ইকোসাইডের মূল থিম। আমরা ইকোসাইডকে ক্রাইম হিসেবে দেশি আইনের এখতিয়ারভূক্ত করার কথা বলেছি।“
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সিআরপিসিতে এটি অর্ন্তভূক্ত করা যায় কিনা বা নতুন কোনো আইন করা সম্ভব কিনা সেটা দেখতে বলেছি।”
এদিকে বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বন অধিদপ্তর গত আট মাসে দুই হাজার ৪৬৮ দশমিক ২০ একর জবরদখল হওয়া ভূমি উদ্ধার করেছে।
এর মধ্যে ঢাকা বন বিভাগের ৬৪২ দশমিক ৫৮ একর, টাঙ্গাইলের ৬৩৬ দশমিক ৪৯ একর, ময়মনসিংহের ১ দশমিক ৫০ একর, চট্টগ্রাম উত্তরের ৭২৩ দশমিক ৪০ একর ও দক্ষিণের ২৩০ দশমিক ৬৫ একর, কক্সবাজার উত্তরের ১৪৪ দশমিক ১৫ একর ও দক্ষিণের ২৪ দশমিক ১৯ একর, উপকূলীয় বন বিভাগ চট্টগ্রামের ২৯ দশমিক ৭০ একর, সামাজিক বন বিভাগ রাজশাহীর ১৯ দশমিক ৪৯ একর এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের ১৬ দশিমিক শূন্য ৫ একর ভূমি ফেরত পাওয়া গেছে।
এই বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “বনভূমি উদ্ধার কার্যক্রমে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। যে কাজটি অতীতে কখনো করা সম্ভব হয়নি। সেই কাজটি শুরু হয়েছে।
বৈঠকে কমিটি বিশ্বের বন উজাড়ের হারের তুলনায় বাংলাদেশের বন উজাড়ের হার যেন কম থাকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করে।
এই বিষয়ে সাবের হোসেন বলেন, “জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি একটি রিপোর্ট করেছে, সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বড় উজাড়ের হার বিশ্বের বন উজাড়ের হারের দ্বিগুণ। বন উজাড়ে পৃথিবীর গড় হার এক দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এটা ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
“আমরা বলেছি এভাবে চলতে থাকলে তো বনই আমাদের থাকবে না। এটা কেন হচ্ছে তা কীভাবে রোধ করা হয় তার জন্য একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেছি।”
বৈঠকে জীব-বৈচিত্র্য বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের নাকি বন অধিদপ্তরের অধীনে থাকবে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনভিত্তিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ড্যাশবোর্ড করার সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি বলেন, “আমরা গাছ কাটা, বন্যপ্রাণি মেরে ফেলাসহ বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ শুনি। কিন্তু এগুলোর ফলোআপ হয় না। যথাযথ মনিটরিং হয় না।
“এজন্য অভিযোগ গ্রহণের একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করেছি। অনলাইনে কোনো অভিযোগ করা যাতে যায় সেজন্য সংসদীয় কমিটি থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপ করবো। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। যিনি অভিযোগ করবেন তিনিও সেটা আপডেট জানতে পারবেন।”
বৈঠকে জানানো হয় বর্তমানে বন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বনের পরিমাণ ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ দশকি ৫২ একর।
এরমধ্যে বনবিভাগের রেকর্ড করা জমির পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৬৩ দশমিক ১৪ একর।
তিন পার্বত্য জেলা ও সুন্দরবনের সংরক্ষিত জরিপ বহির্ভূত ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭১ দশমিক ১৮ একর।
অবশিষ্ট তিন লাখ ৯৫ হাজার ২৭৩ দশমিক ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমির রেকর্ডের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।