স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত, বেড়েছে বিভেদ: ফখরুল

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দেশ দূরে সরে গেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2021, 02:14 PM
Updated : 1 March 2021, 04:14 PM

তিনি বলেছেন, “স্বাধীনতার চেতনা আজকে ভুলুণ্ঠিত। একদলীয় শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের ভুয়া মোড়কে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন, নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন … আমাদের স্বাধীনতার সকল আশাগুলো ভেঙে খান খান করেছে।

“এই ৫০ বছরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা দূরে থাকুক, আরও বিভক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে সংহত করার চেয়ে আরও দুর্বল করা হয়েছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। এমন একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র গঠন করা হচ্ছে যেখানে ন্যায়বিচার দুষ্প্রাপ্য। বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপদযাপনে বিএনপির অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন ফখরুল। গুলশানের লেইক শোর হোটেলে সোমবার এই অনুষ্ঠান হয়।

বিএনপি মহাসচিব বক্তব্যের শুরুতে জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন করে অঙ্গীকারের কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই স্বাধীনতা আমাদের জনগণের স্বপ্নের ফসল। এই স্বাধীনতার আমাদের দীর্ঘদিনের নিজেদের রাষ্ট্র নির্মাণ করার আকাঙ্ক্ষার ফসল। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের করার স্বপ্ন এই স্বাধীনতা।

“আসুন এই পঞ্চাশ বছর পরে আমরা নতুন করে শপথ নিই ১৯৭১ সালের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। যা আমাদের একটি উদার গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে।”

ফখরুল বলেন, “আমরা যখন সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের চক্রান্ত চলছে। বর্তমানে অনির্বাচিত কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার এই চক্রান্ত করছে।”

দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পাঁচ শতাধিক গুম-খুন এবং সমাবেশে পুলিশি হামলা, গুলি, গ্রেপ্তার, কারাগারে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ, অর্থনীতি গুটিকয়েক দলবাজ ব্যবসায়ীর করায়াত্ত, গণমাধ্যমের কণ্ঠ রুদ্ধ, সংবিধান ছিন্ন-ভিন্ন, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

“দুর্নীতি সর্বগ্রাসী সংহারমূর্তি ধারণ করেছে। অহংকার, দাম্ভিকতা, প্রতিহিংসা, সুস্থ গণতান্ত্রিক সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এই আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভ্রান্ত ইতিহাস জানিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমরা সুবর্ণজয়ন্তীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেই সত্যকে অবারিত করতে চাই, স্পষ্ট করতে চাই। যে সত্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধকে মহিমান্বিত করেছিল।

“আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আবার সেই স্বপ্ন দেখাতে চাই- মুক্ত স্বদেশে, মুক্ত সমাজে, মুক্ত মানবিক কল্যাণময় রাষ্ট্রের। আমরা অর্থনৈতিক-সামাজিক বৈষম্য দূর করতে চাই। আজকের যে শিশু, তাকে ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাতে চাই।”

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে বছরব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে স্কাইপে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলওয়াত এবং পরে দলের শিল্পীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের পরিচালনায় দলের শিল্পীরা দলীয় সঙ্গীত, ক্যারিওগ্রাফির মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ‘থিম সং’ এবং শিল্পী রেখা সুফিয়ানা, ইথুন বাবু ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বেবী নাজনীন দেশাত্মবোধক গান গেয়ে শোনান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদীন ফারুক, উকিল আব্দুস সাত্তার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুল কাইয়ুম, শাহিদা রফিক, আব্দুল কুদ্দুস, মামুন আহমেদ, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, তাহসিনা রাশদীর লুনা, বিজন কান্তি সরকার, সুকোমল বড়ুয়া, এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার মুক্তাদির, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, শ্যমা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, জহিরউদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলন, শিরিন সুলতানা, নাসের রহমান, ইশরাক হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেন, প্রচার ও  মিডিয়া কমিটির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আমিরুল ইসলাম আলীম, মীর হেলালউদ্দিন, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, মাহমুদা হাবিবা উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে রেদোয়ান আহমেদ, আহমেদ আবদুল কাদের, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুউদ্দিন মনি, সাহাদাত হোসেন সেলিম, আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ এহসানুল হুদা, আবু তাহের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ফারুক রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা অনুষ্ঠানে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির জোট শরিক দল জামায়াত ইসলামীর কাউকে দেখা যায়নি। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, জাপান, জাতিসংঘ, ইউএসএআইডি, রেড ক্রসসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

নয়া পল্টনের কার্যালয় সজ্জিত

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান’ প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়।

আলোকসজ্জা হয়েছে কার্যালয়ে। ভবনের সামনে বসানো হয়েছে বড় পর্দার টেলিভিশন। সেখানে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্যচিত্র সারাবছর প্রদর্শন করা হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

কার্যালয়ের সামনে যে সব ব্যানার-ফেস্টুন ছিল, তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভবনের সামনে সড়ক দ্বীপে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা ওড়ানো হচ্ছে।

সোমবার রাত ৮টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বোতাম টিপে এই সাজ-সজ্জা, বই মেলা ও চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।

সাজ-সজ্জা ও মুক্তিযুদ্ধের বই মেলা সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান ও  সদস্য সচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাজিম উদ্দিন আলম, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, রফিক শিকদার, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, হাবিবুর রশীদ হাবিব, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।