সরকার আগুন নিয়ে খেলছে: খন্দকার মোশাররফ

জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের ষড়যন্ত্র করে সরকার আগুন নিয়ে খেলছে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2021, 10:09 AM
Updated : 14 Feb 2021, 10:09 AM

রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানকে ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনোক্রমে লেখা সম্ভব হবে না।আজকে ‍যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন, ইতিহাস যারা লেখেবেন সত্যকে মেনে নিয়ে লেখবেন। এদেশে ২৫ মার্চের আগে স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন হয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দালন হয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন।

“আর তাকে নিয়ে টানাটানি।আগুন নিয়ে খেলছেন। আপনাদের হাত পুড়ে যাবে, ছাই হয়ে যাবে। এই খেতাব কেউ দেয় নাই, এই খেতাব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ যারা খেতাব পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকে অর্জন করেছেন। এই খেতাবের ওপরে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার কারও নেই।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “এই সরকার তো সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে এদেশের জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে আছে। তাদের পক্ষে নৈতিক কথা বলা সম্ভব নয়। মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত, মিথ্যা তাদেরকে বলতে হবে, তারা অন্যায়ের ওপরে প্রতিষ্ঠিত, তাদের অন্যায়ই করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আল-জাজিরাএকটা রিপোর্ট দিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দিলেন। যদি ওই রিপোর্টের বিষয়বস্তুগুলো মিথ্যা হয় তাহলে সরকারের দায়িত্ব ছিল প্রতিবাদ করা। কিন্তু তারা বিষয়বস্তুর মধ্যে যান নাই, শুধু রাজনৈতিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন।

“এটাই কি শেষ? দ্য ইকোনোমিস্ট আরও এক স্টেপ সামনে গিয়ে যে লেখা লিখেছে, এখন পর্যন্ত সরকার থেকে প্রতিবাদ করার সাহস পায় নাই। ডয়েচে ভ্যালেতে এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন নাই। কারণ তার কাছে জবাব নাই। অতএব এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নাই।”

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “জিয়াউর রহমানের খেতাবটা কিন্তু যুদ্ধের। দেশটা কিন্তু ভাষণে স্বাধীন হয় নাই, যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে। কিসের যুদ্ধ ছিল? গণতন্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। তা আমাদের এই বক্তৃতায় আসবে না, যুদ্ধে আনতে হবে। সেই যুদ্ধটাই আমাদেরকে শুরু করতে হবে। সেই যুদ্ধের ফলাফল হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি তো সাক্ষী আছি। অমিত বিক্রমে জেড ফোর্স যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সবচাইতে বেশি সাহসিকতা পদক অর্জন করেছে, সবচাইতে বেশি মানুষ জেড ফোর্সের সৈনিকেরা জীবন দিয়েছে এদেশে স্বাধীনতার জন্যে। অথচ তার কমান্ডারের একটি খেতাব, যা দেওয়া হয়েছে সেটি এখন ছিনিয়ে নেবার জন্যে কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

“বাংলাদেশের রাজাকার শব্দটি অত্যন্ত ঘৃণিত। আরেক শব্দ ঘৃণিত হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে ঘৃণিত হয়ে গিয়েছে, যার নাম জামুকা। নব্য রাজাকারের দল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়। যুদ্ধ কত ভয়াবহ এই জামুকা-ফামুকা কল্পনাও করতে পারে না।”

তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার যদিও নির্বাচিত না, তাদেরকে অনুরোধ করব, এই ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগ নিয়ে জিয়াউর রহমানের মতো সেরা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে টানাটানি করে নিজেরা নব্য রাজাকারের পরিণত হবেন না। এই ঝুঁকি নেবেন না আপনারা। অনাগত প্রজন্ম আপনাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখবে। আজকে থেকে ১০০ বছর পরে কে চিনবে, কে জামকুা, কে মন্ত্রী, কে কি ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান এবং এসব মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, “আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের পক্ষে। আমার মতে জিয়াউর রহমান বীর পুরুষদের একজন, খুনিদের বিপক্ষে।

“এই সরকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের চক্ষুশূল মনে করে, এই সরকার রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মান দিতে জানে না, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি, এই সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না।”

আলোচনা সভায় বিএনপির আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, গণফোরামের মোশতাক আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের মকসুদ আলী মঙ্গোলিয়া, আবদুল খালেক, ফরিদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কালাম ফয়েজী, রায়হান আল মাহমুদ, মাজহারুল ইসলাম, সালেহা আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।